ধর্ষনের শিকার ১৩ বছরের কিশোরী সন্তানের মা
বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ধর্ষনের শিকার ১৩ বছরের কিশোরী এখন এক সন্তানের মা, বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ
কুলেন্দু শেখর দাস তালুকদার, সুনামগঞ্জ ঃ সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ গ্রামে ১৩ বছরের কিশোরীকে ধর্ষনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ধর্ষনকারী ও তার এক সহযোগিসহ ২জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ধর্ষনকারী আব্দুনুর মিয়া(৬০) গনিগঞ্জ গ্রামের মৃৃত আরব আলীর ছেলে। অপর সহযোগি কবির আহমদ(৪৬) একই গ্রামের আব্দুল্লাহর ছেলে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ মোঃ এখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গণিগঞ্জ গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছিলেন। যার মামলা নং১০,১৮/৩/২০১৯ইং। প্রায় আড়াই মাস কারাবরণ শেষে আদালত থেকে ধর্ষনকারীর সহযোগি আসামী কবির জামিনে বের হয়েছে, অন্য আসামীরা পুলিশের ধরাছোয়ার বাহিরেই রয়ে গেছে। আসামীরা মামলার বাদীকে ও তার পরিবারের লোকজনদের মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা যায়, এখনো মামলার চার্জশিট আদালতে প্রেরণ করেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা। এদিকে ধর্ষণের ফলে ১৩ বছরের ঐ কিশোরী মেয়েটির জন্ম দেয়া সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নবজাতক শিশুটির পিতা কে হবে, আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় হতভাগিনী মা। মামলাটিকে নিয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: আনোয়ার হুসেন টালবাহানা করেছেন এবং বাদীর পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে মামলাটি মিমাংসার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান মামলার বাদি সিরিয়া বেগম। এই নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্যাতিত পরিবার সূত্রে জানা যায়,ধর্ষনকারীর ঘরে স্ত্রী, ৫ ছেলে,ছেলের বউ ১ মেয়ে নাতি নাতনী থাকার পরও লম্পট আব্দুনুর ঐ নাবালিকা শিশুটিকে একাধারে ধর্ষন করে। যারফলে শিশুটি সাড়ে ৯ মাসের অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে। গ্রাম্য সালিশের কয়েকজন মাতব্বরের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুষ্টু বিচার পায়নি ভিকটিম।
ঘটনা জানাজানি হবার পর নির্যাতিতার দিনমুজুর পিতা গ্রামের মাতব্বরদের দ্বারস্থ হয়ে ধর্ষনের ঘটনাটি তাদের অবগত করেন এবং গ্রামের ৮ জন সালিশদের উপস্থিতিতে বৈঠক বসে। ধর্ষনকারীদের পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর নিকাহ নামার মধ্য দিয়ে বিয়ে করিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় এবং সাত মাস পূর্বে শিশুটির পরিবারকে জোরপূর্বক ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়ার কথা বলে এবং বাকি টাকা দিয়ে কাবিননামা করে ধর্ষনকারীর ঘরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। গ্রাম্য সালিশের বিচারকগণ কথা দিয়ে কথা না রেখে সময় কালক্ষেপন করায় ঐ শিশুটি সাড়ে ৯ মাসের অন্তঃসত্তা হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের। গ্রাম্য সালিশগণ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের নীতিমালা অনুসরন না করেই একটি নাবালিকা শিশুকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর জন্য সালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এমন প্রশ্ন সমাজের সচেতন মহলের। ঘটনার যখন ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা সালিশদের শরণাপন্ন হলে গ্রাম্য বিচারকদের অনীহা ,উদাসীনতার কারণেই এই অবুঝ অন্তসত্তা শিশুটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১৬ মার্চ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫শে মার্চ ২০১৯ইং তারিখে মেয়েটিকে সিলেট এম এ,জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে অন্তসত্তা ১৩ বছরের মেয়েটির ঘরে এক নবজাতক শিশু জন্ম গ্রহন করে।