অপ্রতিরোধ্য পেঁয়াজ ; প্রতি কেজি ২৫০ টাকা
কলম শক্তি ডেস্ক ঃ পেঁয়াজ যেন অপ্রতিরোধ্য। কেউ থামাতে পারবে না এর মূল্যের গতি। প্রতিদিনই যেন নতুন নতুন রেকর্ড গড়ার পথে পেঁয়াজ। সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফায় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে শেষ তিন দিনেই বেড়েছে ৮০ টাকা। পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ায় ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতারাও অবাক। ভারত রফতানি বন্ধ করায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। এরপর থেকে দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার সংবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ১০০ টাকায় পৌঁছায় যায় দেশি পেঁয়াজের কেজি। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশি কিছুদনি পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না- এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন, ফলে আবারও ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি। এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক বক্তৃতায় বলেন, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এই বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টিকে আরও উসকে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে পরের দিন ওই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়। তবে এখানেই থেমে থাকেনি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা। বুধবার ১৫০ টাকা থেকে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ১৭০ টাকা হয়। বৃহস্পতিবার সেই দাম আরও বেড়ে ২০০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার তা আরও বেড়ে ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে কখনো দেশের বাজারে এত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। শুক্রবার ঢাকার সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিশর থেকে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে কথা বললে শ্যামবাজারের সোহেল স্টোরের মালিক বলেন, আজ পেঁয়াজের দাম অনেক বাড়তি। দেশি পেঁয়াজ শ্যামবাজারে ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, আপনারাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন। মিসরের পেঁয়াজ এখানে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পপুলার বাণিজ্যালয়ের বিক্রয়কর্মী মিরাজ বলেন, বাজারে পেঁয়াজ নাই। পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আজ পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে তার কোনো ঠিক নেই। এদিকে রামপুরার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৫০ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মিলন বলেন, প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আমাদের করার কিছু নেই। বুধবার শ্যামবাজার থেকে ১৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। গতকাল পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ২০০ টাকায়। আর আজ শ্যামবাজারে পেঁয়াজ ২৩০ টাকা কেজি। এই ব্যবসায়ী বলেন, শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের কারণেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আর মন্ত্রীদের বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। মন্ত্রীরা উল্টো-পাল্টা বক্তব্য না দিলে কিছুতেই পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা হয় না। শান্তিনগর বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি করছেন। বাজারটির ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখলেও পেঁয়াজের ঘর খালি রেখেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাই ভাই স্টোরের ইমরান বলেন, যে মূল্য তালিকা রয়েছে তা গতকালের। আজ পেঁয়াজের দাম একটু বাড়তি। গতকালের তুলনায় আজ পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। গতকাল যে পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি তা আজ ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। নিউমার্কেটে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। এ বাজারটিতেও পেঁয়াজের মূল্য তালিকা দেখা যায়নি। বাজারের ব্যবসায়ী কাউসার বলেন, প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গতকাল যে পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি ছিল, আজ তা ২৪০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ায় আমরাও হতবাক। দেশে কখনো পেঁয়াজের এমন দাম হয়নি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। পাইকারিতে দাম না কমলে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি না।