অশুভ বুদ্ধির ধূম্রজালে দিরাই শিল্পকলা একাডেমি ; মনগড়া কমিটি গঠন
স্টাফ রিপোর্টার ঃ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর তথাকথিত কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অশুভ বুদ্ধির একটি মহলের মনগড়া কমিটি গঠনের ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু শিল্পকলা একাডেমীর কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে একটি মহল নিজেদের অশুভ এজেন্ডা বাস্তবায়নে মনগড়ামতো কমিটি গঠন করেছেন। নামসর্বস্ব কতিপয় সংগঠনের সদস্যরা অপসংস্কৃতি লালনে বানিজ্যিকরণের জন্যেই এমন কমিটি গঠন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সাংবাদিক, আইনজীবি, অধ্যক্ষ, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সাহিত্যিক, শিল্পানুরাগী থাকার কথা থাকলেও জনৈক নারায়ণ দাসসহ তার অনুসারীদের নিয়ে কৌশলে কমিটি করে নেন। শিল্পকলা একাডেমীর মহা পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী স্বাক্ষরিত উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী গঠনের রুপরেখা সম্বলিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর কার্যনির্বাহী কমিটিতে পদসংখ্যা মোট ১০ টি। এরমধ্যে এরমধ্যে ১ জন সভাপতি, ১ জন সাধারণ সম্পাদক ও বাকি ৮ জন সদস্য হিসেবে থাকবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদাধিকারবলে এর সভাপতি মনোনীত হবেন। ইউএনও কর্তৃক মনোনীত ১ম শ্রেণির একজন কর্মকর্তা হবেন সাধারণ সম্পাদক। ৮ সদস্যের মধ্যে সাংবাদিক ১ জন, সাহিত্যিক ১ জন, শিল্পী/শিল্পানুরাগী ৩ জন, আইনজীবি ১ জন, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ১ জন এবং সরকারি/বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা ১ জন। দিরাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর তথাকথিত কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট। কমিটিতে ২ জনকে সহসভাপতি, ২ জনকে সহসাধারণ সম্পাদক ও ১ জনকে কোষাধ্যক্ষ পদে রাখা হয়েছে। অথচ শিল্পকলা একাডেমীর প্রজ্ঞাপনে এই পদগুলোর ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই। কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা থাকার নির্দেশনা থাকলেও দিরাইয়ে নারায়ণ দাস নামে একজন ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে সাংবাদিক, আইনজীবি, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সাহিত্যিক শিক্ষানুরাগী কাউকেই রাখা হয়নি। কমিটি নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অশুভ বুদ্ধির ধুম্রজাল এবং অপসংস্কৃতি থেকে শিল্পকলা একাডেমীকে মুক্ত করার দাবী জানিয়ে দিরাই উপজেলা খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত সাগর দাস বলেন, যারা অপসংস্কৃতি লালন করে তারাই স্থানীয় সাহিত্য সংস্কৃতিকর্মীদের উপেক্ষা করে নিজেদের অশুভ এজেন্ডা বাস্তবায়নে মনগড়া এই কমিটি গঠন করেছে। দিরাই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার দাস বলেন, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর কমিটি গঠনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা, আমাকে কোনকিছু বলা হয়নি। সুনামগঞ্জ জজকোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট সোহেল আহমেদ বলেন, কমিটি গঠনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নির্দেশনা অনুসরণ না করাটা দুঃখজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই। প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান লিটন বলেন, কমিটি গঠনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নির্দেশনা কিছুই মানা হয়নি, ১০ জনের স্থলে ১৫ জনের কমিটি, তাও আবার যে পদগুলোর অস্তিত্বই নেই সেগুলো এখানে সৃজন করা হয়েছে, যাদের রাখার জন্য বলা হয়েছে তাদের রাখা হয়নি। দিরাই ভাটিবাংলা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন, সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র শিল্পকলা একাডেমীর কমিটি শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতিপ্রেমীদের উপেক্ষা করে কমিটি গঠন অপমানজনক। আমি এর নিন্দা জানিয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি পুর্ণগঠনের দাবী জানাচ্ছি। দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মৃণাল কান্তি আচার্য বলেন, আজীবন সাহিত্য সংস্কৃতির আঙ্গিনায় পদচারণা, জীবনের বহু সময় এই মাধ্যমে ব্যয় করেছি, অথচ শিল্পকলা একাডেমির কমিটি গঠন নিয়ে আমরা অন্ধকারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফি উল্লাহ বলেন, এবিষয়ে পুর্ববর্তী ইউএনও সাহেব বলতে পারবেন। অনিয়ম হয়ে থাকলে কর্তৃপক্ষ বরাবরে অভিযোগ করা যেতে পারে।