জাতীয়

বিদায় ২০১৯ ; বছরজুড়ে দিরাইয়ের যতো আলোচিত ঘটনা

মোশাহিদ আহমদ, দিরাই: ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাঁকডাকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন বছর ২০১৯। নানা ঘটনা দূর্ঘটনায় আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়ে বার বার সংবাদের শিরোনাম হয় দিরাই। কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিবরণ,

১৪ অক্টোবর দিরাইয়ে নৃশংসভাবে শিশু তুহিন হত্যার ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। তুহিন উপজেলার কেজাউরা গ্রামের আবদুল বাছিরের ছেলে। ৬ বছরের শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই অবুঝ শিশুর গলা কেটে হত্যা করা হয়। তার কান ও লিঙ্গ কেটে নেয়া হয়। নিথর শিশুটির পেটে বিদ্ধ অবস্থায় দুটি ধারালো ছুরিও পাওয়া যায়। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে তারই পিতা চাচাসহ পরিবারের লোকজন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এবিষয়টি প্রকাশ হলে দেশবিদেশে দিরাই সম্পর্কে মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরী করে।

২৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার কালিয়াকোটা হাওরের আইনুল বিলে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে তিনজন নারী ও সাতটি শিশু রয়েছে। নিহতরা হলেন, চরনারচর ইউনিয়নের নোয়ারচর গ্রামের আফজালের স্ত্রী আজিরুন (৩০), ছেলে আসাদ (৬),ও সোহান (২), পেরুয়া গ্রাামের নজিবুল্লাহর স্ত্রী করিমা বেগম (৭০), ফিরোজ আলীর ছেলে শহিদুল (৪), ও জাসদের মেয়ে শান্তা বেগম, মাছিমপুর গ্রামের বাবুলের ছেলে শামীম (২), বদরুলের প্রতিবন্ধী ছেলে আবির (৩), রফিনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের আরজ আলীর স্ত্রী রহিতুন নেছা (৩৫) ও মেয়ে তাসমিনা (১১)।

১০ সেপ্টেম্বর দিরাই ভাটিপাড়ায় বিদ্যুতের ক্যাবল ছিড়ে স্টিলের নৌকা পড়ে নৌকা ও খালের পানি বিদ্যুতায়িত হয়ে মামুন মিয়া ও হাবিবুল্লাহ নামের দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

৮ ডিসেম্বর নিখোঁজের তিন দিন পর শিশু সোহাগের ঝুলন্ত লাশ বসত ঘরের লাগোয়া বারান্দাঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। সে পৌর শহরের মজলিশপুর গ্রামের খোকন মিয়ার ছেলে।

১৯ আগষ্ট উপজেলার জগদল ইউনিয়নের নারায়নকুড়ি গ্রামের মৃত আফতর উল্লার ছেলে সামছুল ইসলাম প্রতিপক্ষের আঘাতে মারা যান।

১৫ আগষ্ট গাছের ডালের সাথে ১১ বছরের শিশু রাহিমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। সে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের জকিনগর গ্রাামের আরজু মিয়ার ছেলে।

১৩ আগষ্ট নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রতিবন্ধী তরুণ সোহাগের লাশ উদ্ধার করা হয়।

২৪ মে খুন হন তরুণ ব্যবসায়ী জীবন দাস। সে কুলঞ্জ ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বাজার গ্রামের জয় কৃষ্ণ দাসের ছেলে। ৯ দিন পর অর্ধগলিত অবস্থায় তার লাশ বিবিয়ানা নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।

৭ জুন দিরাই-মদনপুর সড়কে প্রান যায় মেধাবী কলেজ ছাত্রের। সে উপজেলার করিমপুর গ্রামের জানে আলম চৌধুরীর ছেলে নাসিম চৌধুরী রাসেদ।

দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কালধর গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রতিপক্ষের বন্দুকের গুলিতে ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ১৩ জন। ১৫ ডিসেম্বর রবিবার সকালের দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন কালধর গ্রামের সাঈদ উল্লার ছেলে আমির উদ্দিন ও একই গ্রামের আবদুল ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে এলাইছ মিয়া।

২৫ নভেম্বর রহস্যজনক ভাবে কলেজছাত্রী মৌসুমীর মৃত্যু হয়। সে উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের টুক দিরাই গ্রামের রনদা প্রসাদ দাসের মেয়ে।

২৩ নভেম্বর পৌরশহরের ৬নং ওয়ার্ডের মজলিশপুরের নিতাই দাসের বাড়ির পেছনে বনের ঝোপ থেকে নবজাতক কন্যা সন্তানকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি করে।

২৩ অক্টোবর পৌর শহরের হারানপুর ঘাগটিয়া সড়কের মজলিশপুর গ্রামে ইজিবাইক চাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী সুজন দে’র মৃত্যু হয়। সে ওই গ্রামের নান্টু দে’র ছেলে।

১৮ ডিসেম্বর দিরাই পৌর এলাকার কালনী নদী থেকে অনুমান ২ বছর বয়সী অজ্ঞাত শিশুর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।

২ নভেম্বর শ্যামারচর গ্রামের নিজ বসত বাড়ির একটি গাছের ডাল ভেঙে নিচে পড়ে মারা যান আজিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। একই দিনে দিরাই শ্যামারচর সড়কের মিলনবাজার এলাকায় সিএনজি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান পীযুষ রায় (৬০), এঘটনায় আহত মুজাহিদ আলী পরদিন সিলেটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

২৭ জুলাই কালিয়াকুটা হাওরে হাঁসের খাবার আনতে গিয়ে নৌকা ডুবে মারা যান জাহানপুর গ্রামের জসির উদ্দিন।

১৯ মে শ্যামারচর গ্রামে ৭ বছর বয়সী নাহিদ নামে এক শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়, পরিবারের লোকজন দাবী করেন বাজারের মৌসুমি ফল লিচু খেয়ে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে শিশুটি।

২৯ মে রাজানগর গ্রাম সংলগ্ন কামারখালী নদী থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।

১৪ মে লিবিয়া থেকে ইতালি যাবার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মারা যায় দিরাই চন্ডিপুরের ছেলে মাহবুবুল।

এছাড়াও বছরের শুরুর দিকে ৯ জানুয়ারি দিরাই পৌরসভার কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপকে ফেইসবুকে ব্লাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অর্থ দাবীর অভিযোগে সুনামগঞ্জ পৌর মার্কেট থেকে ২ তরুণকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়।

১১ জানুয়ারি পিআইসি গঠন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দিরাই উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরীর লোকজনের মধ্যে দিরাই বাজারে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এতোসব মন্দ খবরের মধ্যে দিরাইয়ের কিছু শিক্ষার্থীর বিভিন্ন ইভেন্টে জাতীয় পর্যায়ে পদকপ্রাপ্তি এলাকার সুনাম বয়ে এনেছে। এদের মধ্যে তানিয়া আফরীন চৌধুরী, মহাশ্বেতা তালুকদার রাই, অভিজ্ঞান চৌধুরী, ইশা রায়, অতীশ দীপংকর, জিৎ তালুকদার উল্লেখযোগ্য।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap