জাতীয়

জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সাবেক পরিচালক ইমনকে দুদকে তলব

কলম শক্তি ডেস্ক ঃ জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সাবেক পরিচালক, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ১৫ই জানুয়ারি তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির জন্য বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জমির হুকুম দখলের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইমনের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. নূরুল হুদা এ চিঠি পাঠিয়েছেন। দুদকের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সাবেক পরিচালক এনামুল কবির ইমনের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্য, সরকারি কাজের কমিশন আদায় ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত তার বিপুল অবৈধ সম্পদের খোঁজে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে দুদক। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করতে দুদকের উপ-পরিচালক মো. নূরুল হুদাকে দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন। ইমনের কাছে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে- তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্য ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ১৫ই জানুয়ারি সকাল ১০টায় তাকে দুদকে হাজির হতে হবে। অন্যথায় অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই বলে দুদক মনে করবে। তাকে নিজের ও স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের (যদি থাকে) ফটোকপি সঙ্গে আনতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো দুদকের চিঠিতে ইমনের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে সুনামগঞ্জ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির জন্য বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের অনুকূলে আরজ আলীর জমির হুকুম দখলের বিষয়ে ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আরো কোনো রেকর্ড ও নথি থাকলে তাও দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির মাধ্যমে সুনামগঞ্জ সদরে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ডাইরেক্টর থাকার সুবাদে ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন এখানে অবৈধভাবে অর্থ আয়ের সুযোগ নেন। তিনি তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী আত্মীয় যিনি বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় থাকেন এবং ইমনের মাধ্যমে তদবির বাণিজ্য করেন সেই আত্মীয় আরজ আলীর নামে শহরে প্রবেশের আগে ভূমি ক্রয় করেন। অত্যন্ত নিচু এলাকা এবং কমমূল্যের এই ভূমি অল্প টাকায় ক্রয় করেন। বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনের ভূমি নির্বাচনের সময় ব্যারিস্টার ইমন পাওয়ার গ্রিডের ডিরেক্টর থাকায় প্রভাব খাটিয়ে আরজ আলীর নামে ক্রয় করা ভূমি হুকুম দখলের জন্য নির্বাচন করান। সাব-স্টেশনের জন্য ৫ একর ২৫ শতক ভূমি হুকুম দখল করা হয়। ভূমির প্রকৃত মূল্য সামান্য টাকা হলেও এই ৫ একর ২৫ শতক ভূমি ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দিয়ে অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণ করা ভূমির অল্প কিছু ভূমি ব্যতীত সব ভূমির মালিক আরজ আলী। পরে আরজ আলী ভূমি হুকুম দখলের টাকার বিশাল অংশ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে চেকের মাধ্যমে ব্যারিস্টার ইমনকে প্রদান করে। তদন্ত করলে দেখা যাবে বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আরজ আলীর নামে কোন সময়ে ভূমি ক্রয় করা হয়েছে আর ক্রয়ের কতদিনের ভেতর আরজ আলীর নামে কৃত ভূমি হুকুম দখল করা হয়েছে। অল্প মূল্যের ভূমিকে কীভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে অধিক মূল্যে হুকুম দখল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যারিস্টার ইমন অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে লাভবান হয়েছে আর সরকারের বিপুল টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। পাওয়ার গ্রিডের পরিচালক থাকাকালে বিভিন্ন বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণে কমিশন, তদবির, জেলা পরিষদের প্রশাসক থাকাকালে অনিয়ম করে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে, সুনামগঞ্জের আলিশান বাড়ি, ঢাকার ধানমণ্ডিসহ একাধিক মহামূল্যবান ফ্ল্যাট, ইংল্যান্ডে বাড়িসহ দেশ- বিদেশে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সংগৃহীত – দৈনিক মানবজমিন

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap