জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ; দিরাইয়ে ৭৯ ইভেন্টে প্রতিযোগি ৩২০ জন
স্টাফ রিপোর্টার: দিরাইয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা। সরকার এর উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করলেও টনক নড়ছেনা সংশ্লিষ্টদের। এবার জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়নি উপজেলার ৯০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার প্রাথমিক, এবতেদায়ী ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ২২৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় মাত্র ৩০ টি প্রতিষ্ঠান। ৭ ও ৮ জানুয়ারি দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত জাতীয় এ কর্মসূচির ৭৯ টি ইভেন্টের মধ্যে ৩ টি ইভেন্টে কোন প্রতিযোগি অংশ নেয়নি। বাকি ৭৬ টি ইভেন্টে সর্বমোট ৩২০ জন প্রতিযোগি অংশ নেয়। এরমধ্যে বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীর সংখ্যা ২২০। অভিভাবকদের সচেতনতায় বিচ্ছিন্নভাবে সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহনে কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ সরকার শিশু কিশোরদের সৃজনশীল বিকাশ সাধণ, দৈহিক সুস্থ্যতা বৃদ্ধি, শিক্ষা ও বিদ্যালয়ে মনোনিবেশ বাড়াতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতা চর্চার উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে আসছে। কিন্তু দিরাইয়ে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এর চর্চা হচ্ছে না বললেই চলে। দিবস আসলে দায়সারা গোছের ফটোসেশনের মাধ্যমে শেষ করা হয়। যার কারণে হাওরাঞ্চলের শিশুকিশোরদের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী আনন্দ উল্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাশাপাশি অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণে জাতীয় শিশুকিশোর প্রতিযোগিতা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয়রা জানান, পাড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষা সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রশংসনীয় উদ্যোগ, অথচ দিরাইয়ে এর সুফল পাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরা। এ ধরণের চর্চা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে অনেক মেধাবী শিশুর বিকাশ ঘটছে না। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুষ্টিমেয় শিক্ষক ও অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে মাঠে এসেছেন। এসময় একাধিক শিক্ষক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি ইভেন্টে বিজয়ীর সংখ্যা নির্ধারিত ৩ জন হলেও বেশীর ভাগ ইভেন্টে ৩ জন প্রতিযোগিই পাওয়া যাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না শর্তে কিছু শিক্ষক জানান, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি, এমন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী করা হচ্ছে, একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগি দেখানো হচ্ছে। দিরাই পৌর সদরের চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাসিন্ধু দাস বলেন, প্রতিযোগিতার বিষয়ে চিঠি দিয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি নিজ উদ্যোগে আমার ছেলেকে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিয়েছি। জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতা কতগুলো ইভেন্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটাও জানেন না উপজেলার নারায়নকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জৌাতিপ্রসাদ মজুমদার। তিনি বলেন, আমাকে চিঠি দিয়ে কিছু জানানো হয়নি, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে কোন শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম জানেনই না, জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি স্বগরিমায় বলেন, আমিতো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছি, প্রতিযোগিতাতো শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। তাড়ল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাইনুল হক চৌধুরী খেয়ালই করেননি, কবে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। তিনি বলেন, আমাকে অফিসিয়াল কিছু জানানো হয়নি। রফিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুমন দাস বলেন, আমি প্রতিযোগিতার বিষয়ে কিছুই জানিনা, গত মঙ্গলবার অফিসের কাজে দিরাই এসে জানতে পারি জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা চলছে। আমার মতো উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ই এবিষয়ে জানেনা। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার রায় বলছেন, পত্র প্রদানের মাধ্যমে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্টানকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে। চর্চা না থাকার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন।