সারাদেশ

বিয়ের আসরে পথশিশুদের নিজহাতে আপ্যায়ন করলেন কনে

কলম শক্তি ডেস্ক ঃ বিয়ের আসরে কনের প্রধান কাজই হচ্ছে সাজসজ্জা করে বধূবেশে বরের পাশে আলোকিত মঞ্চে বসে থাকা আর অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিবাদন গ্রহণ করা। বাঙালি সংস্কৃতিতে এমনটিই হয়ে আসছে আবহমান কালজুড়ে। তবে এই নববধূর ক্ষেত্রে দেখা গেল একেবারেই ভিন্ন এক চিত্র। মঞ্চে বসে শুভেচ্ছা গ্রহণ না করে নিজের বিয়েতে নিজেই আপ্যায়নের কাজে নেমে পড়েন নববধূ। তবে বিশেষ যে বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে, তা হলো– কোনো সচ্ছল আত্মীয়স্বজনদের নয়; সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের এনে নিজ হাতে বেড়ে পেটপুরে খাওয়ালেন ওই নববধূ। গত শনিবার ঢাকার ইস্কাটনে এক কমিউনিটি সেন্টারে নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানে এমন অভিনব কাজ করেছেন মুনীরা নামে এক তরুণী। ছিন্নমূলদের শুধু পেট ভরে পোলাও-কোর্মা খাওয়াননি তিনি, বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের উপযুক্ত পোশাকও কিনে দিয়েছেন তাদের। নববধূ মুনীরার এ উদ্যোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া পড়েছে। শনিবার তার এমন উদারতার সাক্ষী হয়েছেন অতিথিরা। তাদের কেউ একজন শিশুদের আপ্যায়নের একটি দৃশ্য ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর পরই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিতে এমন কাজের জন্য প্রশংসার বন্যায় ভাসছেন মুনীরা। জানা গেছে, মুনিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন গবেষক। বিয়ের অনুষ্ঠানে কেবল অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই নিমন্ত্রিত হন ও ভূরিভোজ করেন। আর তা দূর থেকে দাঁড়িয়ে তা দেখে পথশিশুরা। মাঝেমধ্যে খাবারের লোভে গেলে অনেকে তাড়িয়ে দেন এসব পথশিশুদের। এমন দৃশ্য অনেকবার দেখেছেন মুনিরা। সবসময়ই বিষয়টি তার বিবেককে নাড়া দিত। তাই নিজের বিয়েতে পথশিশুদের খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন মুনিরা। মুনিরা জানান, অন্যদের বিয়ের গেটের সামনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দাঁড়িয়ে থাকা দেখেছি। সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ তাদের কাছে পৌঁছলেও খাবার তাদের কাছে অধরাই থাকে। এটি খুবই কষ্টদায়ক দৃশ্য। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই– অন্তত আমার বিয়েতে ভালো পোশাক পরিয়ে সমাজের অবহেলিত শিশুদের পেটপুরে খাওয়াব। সেটিই করেছি। জানা গেছে, মুনীরার এ ইচ্ছাপূরণে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সহায়তা করেছে। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে ‘এক টাকায় আহার’ কার্যক্রম চালিয়ে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া মুনীরার এই ছবিতে ‘দারুণ উদ্যোগ’, ‘সত্যিই অসাধারণ’, ‘জয় হোক মানবতার’ এসব কমেন্ট লিখেছেন নেটিজেনদের একাংশ। কেউ কেউ ‘লোকদেখানো কাজ কারবার’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। নেতিবাচক মন্তব্যকারীদের উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন নামের একজন লিখেছেন, ‘মুনীরার বিয়েতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দেখে ও তাদের আপ্যায়নের দৃশ্য দেখে অনেকে হয়তো বিরক্ত হয়েছেন। কিন্তু সাহসী স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে মুনীরা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা অনেককেই অনুপ্রাণিত করবে। ভাল থাকুক মানবদরদী এ দম্পতি।’

সূত্র ঃ দৈনিক যুগান্তর

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap