যাদুকাটা ও রক্তি নদীতে চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল

আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ও রক্তি নদীতে ইজারাদার ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ও মানববন্ধন করেছে নৌ-মালিক, শ্রমিক, সর্দার, হাজী নোয়াজ আলী ট্রাষ্ট ফাউন্ডেশন সমিতির নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় সোহালা নতুন বাজারের নদীর পাড়ে ঘন্টাব্যাপী এই মানবন্ধন অনুষ্টিত হয়। নুর হোসেন মল্লিক এর সভাপতিত্বে ও শ্রমিক নেতা আব্দুল কদ্দুছের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ছাত্তার ইদু মিয়া, নৌকা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক সিদ্দিক মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা মুহিত চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোঃ আলী হোসেন, আব্দুর রহিম, সিদ্দিক মিয়া, হোসেন আহমদ রাজা, বাছির মিয়া, ছালাম মিয়া, সোহেল মিয়া, হারুন মিয়াসহ নৌ-মালিক, শ্রমিক, সর্দার ও হাজী নোয়াজ আলী ট্রাষ্ট ফাউন্ডেশন সমিতির নেতৃবৃন্দ। এ সময় বক্তাগন বলেন, এই নদীপথে হাজার হাজার নৌকা প্রতিদিন বালু ও পাথর বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে আর এই নৌকা থেকে ঘাটের নাম করে দুটি (আনোয়ারপুর লোহাছড়া ও ফাজিলপুর) পয়েন্টে এবং ঘাগরা ঘাটে স্থানীয় সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজরা দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদাবাজি করছে। প্রতি নৌকা থেকে জোর করে ১ হাজার থেকে শুরু করে ৩-৪ হাজার টাকার বেশী নিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ঐসব চাঁদাবাজদের লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে আমরা নিরীহ শ্রমিক মালিকদেরকে মারপিট করে। সম্প্রতি ফাজিলপুর টোল আদায়ের নামে নৌকার মালিক ও শ্রমিকদের মারপিঠ করেছে চাঁদাবাজরা। ঐসব চাঁদাবাজ ও ঘাট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ায় নৌ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সবাই। এর সুষ্ট সমাধান না হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে ঐসব চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা হবে বলে জানান বক্তাগন। তারা অভিযোগ করে বলেন, তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের দক্ষিনকূল গ্রামের হাজী মর্ত্তুজ আলী ওরফে রাজহাস এর পুত্র ফয়সল, কাশেম, জাহাঙ্গীর, আলমগীর, সেলিম, দক্ষিনকুল গ্রামের নবাব মিয়ার পুত্র বাবুল মেম্বার ও তার ভাই সারোয়ার, ফাজিলপুর বালু পাথর মহালে আজাদ হোসেন এর নামে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষনশ্রী ইউনিয়নের হালুয়ারগাঁও গ্রামের আব্দুল মতিন এর পুত্র লিটন, ঘাগরা ঘাটে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কোনাটছড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র খোকন, জারু ডাক্তারের পুত্র বাবুল মিয়া,পাটানপাড়া গ্রামের মতি মিয়ার পুত্র ইব্রাহিম, মৃত রইছ মিয়ার পুত্র আনিছ মিয়া ও ছায়েদ আলীর পুত্র ফতেহ আলী এবং জেলহাজতে আটককৃত ইজারাদার শফিকুল ইসলামের ভাই শেখ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ চিহ্নিত চাঁদাবাজরা বালিবাহী নৌকা আটক করে ব্যবসায়ী, নৌকা মালিক ও শ্রমিকদেরকে প্রাণে হত্যার ভয় দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত রয়েলিটি টোল ট্যাক্স এর পরিবর্তে তাদের ব্যক্তিগত নিয়মে অতিরিক্ত ৪ থেকে ৬ গুন হারে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে। বাবুল মেম্বার বলেন, গত ৮/৮/২০১৯ইং ৮৪৫ (১৫) নং স্মারকে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ২০০ থেকে ৪০০ মে:টন বা তদুর্ধ মালবাহী ভলগেড কার্গো বার্জ হতে ৯শত টাকা হারে টোল আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই নিয়মেই টোল আদায় করছি। উপজেলা চেয়ারম্যান করুনাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, এটি ভূয়া স্মারকাদেশ। কারণ ঐ আদেশ ছিল আসিফ ইকবালের ব্যক্তিগত আদেশ। এই আদেশ পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বাতিল করে দিয়েছি। ৯০০ টাকার জায়গায় আমরা ধার্য্য করেছি ৩ শত টাকা। যা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, আমি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সর্বসম্মত সিদ্বান্তে ধার্য করা হয়েছে। ফাজিলপুর বালু পাথর মহালের ইজারাদার এটিএম হায়দার বখত রবিন বলেন, আমাদের মহালে নির্ধারিত ব্যক্তির পরিবর্তে যদি লিটন নামের কোন যুবক চাঁদা আদায় করে তাহলে তাকে গ্রেফতারের জন্য আমিও পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবী জানাচ্ছি। ফাজিলপুর নৌকাঘাটের ইজারাদার ফয়সল মিয়া বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত হারে রশিদ দিয়ে টোল আদায় করছি। আমাদের ঘাটে কেউ যদি নির্ধারিত রেইটের বেশী হারে আদায় করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নিতে আমাদের আপত্তি নেই। স্থানীয় বাদাঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের এসআই মাহমুদুল ইসলাম সমবেত মানববন্ধনকারীদেরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে চিহ্নিত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের জন্য আহবান জানিয়ে তাদের কর্মসুচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন,আমাদের জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় খুব সৎ মানুষ ও বিচক্ষন কর্মকর্তা। তিনি কোন চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেননা। আপনারা যেকোন ন্যায়সঙ্গত বিষয়ে তার কাছে অবশ্যই ন্যায়বিচার আশা করতে পারেন। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন,তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল। এ সময় তিনি চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, সরকারী নিয়মের বাহিরে অতিরিক্ত টোল আদায় যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।