জাতীয়

দিরাইয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে এলাকাবাসীর প্রতিরোধ

বিশেষ সংবাদদাতা ঃ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ন প্রকল্পে কোটি টাকার মাটি ভরাটের কাজ উদ্বোধনের তিন দিন অতিবাহিত হলেও এলাকাবাসির অব্যাহত প্রতিরোধের মুখে কাজ শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। শুক্রবার পর্যন্ত প্রকল্প স্থানীয় কয়েকশ নারী পুরুষ খেয়ে না খেয়ে প্রকল্প এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। এদের মধ্যে অনেকেই প্রকল্প এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন বলে জানা গেছে এবং অধিকাংশ লোকই সংখ্যালঘু। স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসির উপস্থিতি এবং মতামত উপেক্ষা করে বিগত মঙ্গলবার উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের সুনামপুর মৌজায় অনুমোদিত আশ্রয়ন প্রকল্প-২এর অন্তভুক্ত সুনামপুর-১ প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফি উল্লাহ। উদ্বোধনকালে প্রকল্প এলাকায় কোন শ্রমিক কিংবা কাজের সরঞ্জাম না থাকলেও শুধুমাত্র লাল নিশানা পুঁতে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধন ঘোষণার পরদিন কাজ শুরু করলে এলাকাবাসির প্রতিরোধের মুখে কাজ বন্ধ রাখা হয়। শুক্রবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সুনামপুর, কিত্তাগাঁও, আনোয়ারপুরসহ নিকটবর্তি কয়েকটি গ্রামের নারী পুরুষ প্রকল্প এলাকায় অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের সাথে আলাপকালে এ প্রতিবেদককে তারা জানান, ‘সুনামপুর মৌজার জেল নং-১১, ১নং খতিয়ানের ১নং দাগের সরকারের ২৫ একর ভূমি রয়েছে, এর মধ্যে প্রায় আড়াই শতাধিক ভূমিহীন পরিবার ১৫-২০ বছর ধরে স্থায়ী বসবাস করে আসছেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে খাজনা পরিশোধ এবং হোল্ডিং চার্জ প্রদানের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উক্ত ভূমির ১০ একর জায়গায় আশ্রয় প্রকল্প গ্রহন করা হলে, তাদের আড়াইশ ভূমিহীন পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে এবং পার্শ্ববর্তি কিত্তাগাঁও, সুনামপুর ও আনোয়ারপুর এই তিনটি গ্রামের গোচারণ ভূমিসহ ধান মাড়াই, খেলার মাঠ, ধান শুকানোর কোন জায়গা থাকবে না, এমনকি এ তিনগ্রামের সংখ্যালঘু পরিববার হুমকির মুখে পড়বে মর্মে স্থানীয় সাংসদের সুপারিশ নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলেও তা না করে হঠাৎ করে উদ্বোধনের নামে লাল নিশানা উড়িয়ে দেন ইউএনও। গ্রামবাসির আপত্তির বিষয়ে শুনানী নিয়ে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে ইউএনও মো. সফি উল্লা বলছেন, উদ্বোধন করা হয়েছে, কাজও চলবে। এদিকে অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত গ্রামের প্রভাকর দাস, শান্তি রানী, ময়না রানী দাসসহ অনেকেই বলেন- ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে নয়, পূর্ব নির্ধারিত স্থানে কাজ না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজুয়ান হোসেন খান উনার নিজের স্বার্থ হাসিলে স্থান পরিবর্তন করে পশ্চিম দিকে কাজ শুরু করতে চান। এতে আমরা অবস্থান করে আপত্তি করছি, আমরা মরব তবুও আমাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাই এ ভূমিতে কাজ করতে দেব না। এ ব্যাপারে গ্রামবাসির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে।’ মঞ্জু সরকার জানান, ‘চেয়ারম্যান তার প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে এলাকাবাসির স্বার্থ নিয়ে লুকোচুরি খেলছেন। এমনকি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অজ্ঞাত পরিচয়ে এলাকাছাড়াসহ প্রাণ নাশে হুমকি দেয়া হচ্ছে। গ্রামের স্বার্থ রক্ষায় আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি, আমরা কারো হুমকি ধামকিতে ভীত নই।’ কিত্তাগাঁও গ্রামের পুর্নেন্দু সরকার রনি জানান, এলাকার ভূমিহীন ও নীরিহ লোকদের উপর মিথ্যা অভিযোগ এনে পুলিশি হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদান করা হচ্ছে। আমি শুনছি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে আমাকে সদস্য রাখা হয়েছে অথচ আমি কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে আমি ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেব।’ ইউপি সদস্য মিরাজ মিয়া জানান, আমি এই ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য হলেও আমাকে এ ব্যাপারে কিছুই জানান নি চেয়ারম্যান, উনার পছন্দের লোক ও পছন্দের জায়গায় কাজ শুরুর পায়তারা করছেন, এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হোক আমি চাই না। ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রেজুয়ান হোসেন খান বলেন, কিত্তাগাঁও গ্রামের কিছু লোক কাজে বাধা প্রদান করছে। আমি থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সদস্যদের সাথে আলাপ করেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়নের কথা রয়েছে এবং মাটি ভরাটের কাজ ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে প্রকল্পে মাটি ভরাট কাজের জন্য ৯৯৬.৭৭৮ মেট্রিক টন গম প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap