রাজনীতির কবি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
মোশাহিদ আহমদ ঃ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী প্রয়াত জাতীয় নেতা, রাজনীতির কবি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দিরাইয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্মৃতি পরিষদ, প্রেসক্লাব, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সোহেল আহমদ জানান, প্রয়াত নেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালি, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, সমাধিস্থলে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন প্রয়াত এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও শোক র্যালি করবে বলে জানা গেছে। দিরাই প্রেসক্লাবের উদ্যোগে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান লিটন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। পরদিন তার নির্বাচনি এলাকা দিরাই পৌরসদরস্থ বাসভবনের পাশে তাকে দাহ করে সমাধিস্থল নির্মাণ করা হয়।
হাওরের কাদা-জল মেখে হাওর জনপদে যাত্রা-নাটক মঞ্চে দাফিয়ে বেড়ানো দুখু সেন থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্ণিল রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী হয়ে উঠেন। তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে সমাদৃত সুরঞ্জিত সেনের রাজনীতির শুরু বামপন্থী সংগঠনে। সাম্যবাদী দর্শনে দীক্ষা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করা এই নেতা দীর্ঘ ৫৯ বছর দাপটের সঙ্গে দেশের রাজনীতির জাতীয় অঙ্গনে বিচরণ করেছেন। রাজনৈতিক জীবনের কঠিনতম সময়েও কাউকে সমীহ করে চলেননি সুরঞ্জিত। দুর্দান্ত সাহস দেখিয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অর্জন করেছেন বহু সম্মান।স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদ সদস্যসহ চার দশকের ক্যারিয়ারে অধিকাংশ সংসদেই প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সক্রিয় যোদ্ধা ছিলেন সুরঞ্জিত। একমাত্র বেসামরিক লোক হিসেবে তিনিই মুক্তিযুদ্ধকালীন ৫ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৯, ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা, মহাজোট সরকারের মন্ত্রী, আইন-বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কমিটিরও কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বামপন্থী সুরঞ্জিত ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
১৯৪৫ সালের ৫ই মে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের আনোয়ারপুর গ্রামে জন্ম সুরঞ্জিতের। তার বাবা চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও মা সুমতি বালা সেনগুপ্ত। তিনি দিরাই মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী ও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সিলেট এম সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে সন্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশবরেণ্য এই রাজনীতিক ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। সত্তরের ঐতিহাসিক প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিজয়ের সময়ও ন্যাপ থেকে একমাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশ বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য।