জাতীয়সারাদেশ

ঐতিহ্য হারিয়েছে দিরাই ধল মেলা

মোশাহিদ আহমদ : ফাল্গুন এসেছে ধলের মেলা, যাবি যদি আয় দলে দলে, উঠেছে বেলা – দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধল গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান কালনী নদীর দক্ষিণ পাড়ের ধল মেলা নিয়ে শাহ আবদুল করিম গানে গানে নিজের অনুভূতি এভাবেই প্রকাশ করেছেন। ধল মেলা শুরুর ইতিহাস সঠিকভাবে জানা না গেলেও জনশ্রুতি আছে প্রায় আড়াইশ বছর পুর্বে ধল গ্রামের মাঠে পরমেশ্বরী শিলা দেখা যায়। এ শিলাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার ভেড়া, মহিষ বলি দিয়ে পূজা করতে থাকেন। পূজাকে কেন্দ্র করে মাঠে বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। ওই সময় থেকেই মেলার প্রচলন হয়ে আজো চলে আসছে ধল মেলা। প্রতিবছর নামসংকীর্তন, পাঁঠা বলি, পূজা ও ভজন গানের পাশাপাশি মেলায় আয়োজন হতো যাত্রাপালা, বাউল গান, সার্কাস, লাঠি খেলাসহ গ্রামীন সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুসঙ্গ। মন্ডা, মিঠাই, দই, মুড়ি, রসগোল্লা, উকরা, আখ (কুইয়ার), বেল, বাঁশ বেত লোহা ও এ্যালুমিনিয়ামের নানান তৈজসপত্রসহ কসমেটিকস ও শিশুদের খেলনার হাজারো দোকান বসতো। ধীরে ধীরে মেলা এলাকার সামাজিক অনুষ্ঠানে রুপ নেয়। দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচুংসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লাখো মানুষের সমাগম ঘটতো মেলায়। মেলা উপলক্ষ্যে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে নাইওরীরা আসতেন, বিশেষ করে জামাইদের আসতেই হতো, চলতো পিঠা পালার ধুম। একসময় এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার একটি স্বার্থান্বেষী চক্র গ্রাম উন্নয়নের নাম করে মেলা লিজ প্রথা চালু করে। এতে করে মেলায় মাদক, জুয়া, ভেরাইটিজ শো নামে স্বল্প বসনা নারীদের অশ্লীল নৃত্যের প্রচলন ঘটে। অশ্লীলতার দাপটে কোনঠাসা হয়ে পড়ে গ্রামীন সংস্কৃতি। মেলা থেকে হারিয়ে যায় সার্কাস, লাঠি খেলা, যাত্রাপালা। এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় গ্রামের একদল যুবক। তাদের অব্যাহত প্রতিবাদে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিগত তিন বছর যাবত বন্ধ আছে জুয়া, মাদক ও অশ্লীল নৃত্য। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap