জাতীয়

অবৈধ ট্রলি গাড়ির দৌরাত্ম্যে অতিষ্ট দিরাইবাসী ; একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা

মোশাহিদ আহমদ : ট্রলি, কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্র্যাক্টরের পেছনাংশে লোহার বডি সংযুক্ত করে তৈরী দানবাকৃতির আশ্চর্য এক মালবাহী বাহনের নাম। ট্রলিতে নেই ব্রেক, হেডলাইট, সিগন্যাল লাইটসহ গাড়ি চালাতে প্রয়োজনীয় কোনকিছুই। চরম ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাহন দিরাই পৌরসদরসহ উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন সড়কে অবাধে চলাচল করছে। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় অনেকে হাত পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষার উদ্যোগ নিলেও অবৈধভাবে চালিত এসব ট্রলি নামের যানবাহন বন্ধে কোন কার্যকর তৎপরতা চোখে পড়েনি। পাশাপাশি পৌরসদরে চলাচল বন্ধে পৌর কর্তৃপক্ষও উদাসীন।

কৃষিকাজের ব্যবহার উপযোগী করে তৈরী এই যন্ত্রটি জমি চাষে ব্যবহার করার কথা থাকলেও এর বিচরণ এখন শহরের ব্যস্ততম রাস্তায়। দিনে-রাতের ব্যস্ততম সময়ে অবাধে চলাচলের দরুণ শহরে শব্দদূষণ, বায়ু দূষণ, শিক্ষার্থী পথচারীদের চলাচলে বিঘ্নসহ অসহনীয় যানজটে নাকাল পৌরবাসী। বিপদজনক এই বাহন একদিকে দুর্ঘটনার দিকে টেলে দিচ্ছে জনসাধারণকে অন্যদিকে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য তৈরী করা সড়ক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অনুসন্ধান করে জানা যায়, ট্রলি নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত এইসব যন্ত্র মূলত চাষাবাদের কাজে ব্যবহার উপযোগী করে তৈরী। জমিতে চলাচলের এই যন্ত্রটিকে একশ্রেণির মুনাফালোভী লোক রাজনৈতিক আশ্রয়ে অতিরিক্ত চাকা সংযোজন করে ট্রাক হিসেবে ব্যবহার করছেন। ৪ চাকা/ ৬ চাকা বিশিষ্ট ৮ ফুট চওড়া এবং ২০ থেকে ৪০ ফুট লম্বা হয় এই যানবাহন। সড়কে চলাচলের কোন বৈধতা না থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে অবাধে চলাচল করছে দৈত্যাকৃতির এই যানটি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলায় অন্তত ২০০ টি এমন যান রয়েছে। এরমধ্যে শতাধিক ট্রলি পৌর শহরে চলাচল করে থাকে। এসব বাহনের চালকের কোন ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও মুনাফালোভী সুবিধাভোগীদের ছত্রছায়ায় সকল সড়কে ফ্রিস্টাইলে দাফিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব বাহন প্রায়ই ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিরাই বাসস্ট্যান্ডে বেপরোয়া ট্রলি চাপায় ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে টুকরো হয়ে যায় উপজেলার গচিয়া গ্রামের পেশাদার মোটর সাইকেল চালক মৃত আব্দুল ওয়াহিদের পুত্র শহিবুর রহমানের। এরআগে এই বাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ডান পা তেথলে যায় উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের রেনু মিয়ার। চিকিৎসকরা তার পা উরুতে কেটে ফেলতে বাধ্য হন। এমন আরো অনেক ঘটনার নজির থাকলেও এসব বাহন বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা অনতিবিলম্বে পৌর শহরসহ উপজেলার সকল সড়কে এই অবৈধ ট্রলি গাড়ি চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।

পৌর শহরের রাস্তায় অবাধে ট্রলি চালানোর বিষয়টি স্বীকার করে ট্রলি মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন বলেন, শহরের রাস্তায় ট্রলি না চালানোর জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ এবং আমরা দায়িত্বশীলরা প্রতিটি মিটিংয়ে চালকদের নির্দেশনা দিয়ে আসছি। কিন্তু তারা এটি মানছেন না। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী ও গ্রাহকরা নিজ দায়িত্বে ট্রলি বাজারের ভিতরে প্রবেশ করাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। এসব গাড়ির কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে কফিল উদ্দিন বলেন, গত বছর ১৪ টি ট্রলির লাইসেন্স দিরাই পৌরসভা দিয়েছিল। এরপর আর দেয়নি, এবছরও আর লাইসেন্স দিচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত বাজারের ভিতরে ট্রলি চলাচল করতে পৌরকর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে। এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, সড়ক এবং সড়কে চলাচলকারী পথচারীদের জন্য এই গাড়িগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap