দিরাইয়ে আধঘন্টায় ১১ গবাদিপশুর মৃত্যু
কলম শক্তি ডেস্ক ঃ- সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে আধঘন্টার মধ্যে একেএকে ১১ টি গবাদিপশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গরুগুলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে সন্দেহে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের লোকজন দ্বিগবিদিক ছুটাছুটি করে নিজেদের ঘরে আশ্রয় নিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে দেন। রোববার সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের সুতারগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল যায়। অনুসন্ধানকালে গ্রামের পঞ্চায়েতী ৩ জন রাখাল জানান, গ্রামের সরকারি খাস জমি থেকে মাটি উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট ডোবার পানি পান করার পর ছটপট করতে করতে গরুগুলো মারা যায়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় সুতারগাঁও ও চালতপাড় গ্রামের পার্শ্ববর্তী গো-চারণ ভূমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে সুতারগাঁও গ্রামের দিগেন্দ্র দাসের ৩টি, দিলিপ দাসের ২টি, শিশির মোহন দাসের ১টি, তিলক মোহন দাসের ১টি, হরিলাল দাসের ১টি, রায়মোহন দাসের ১টি, পিন্টু দাসের ১টি ও চাতলপাড় গ্রামের নজির খানের ১টিসহ মোট ১১ টি গরুর নিথর দেহ। গ্রামবাসী জানান, চাতলপাড় গ্রামের আনিস উল্লার পুত্র আবু সালাম সরকারী জায়গার ছোট ছোট ৬/৭ টি ডোবা দখল করে মৎস্য চাষ করে আসছেন। কিছুদিন পূর্বে সরকারি ভূমি থেকে মাটি কেটে নেয়ার ফলে নতুন একটি গর্ত হয়, সেখানে আবু সালিম মাছের চাষের উদ্দেশ্যে শ্যালো মেশিন দিয়ে পাশের বিল থেকে পানি ভর্তি করে তাতে চুন ও বিষ প্রয়োগ করে। প্রতিদিনের মতো আজ (রোববার) সকাল ৯ টার দিকে গ্রামের পঞ্চায়েতি ৩ রাখাল চাতলপাড় ও সুতারগাঁওয়ের গৃহস্থদের গরুর পাল নিয়ে ঘাস খাওয়ানোর জন্য মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে বিষ প্রয়োগকৃত ডোবার পানি পান করে কয়েকটি গরু। পানি পান করার কিছুক্ষনের মধ্যেই গরুগুলো লাফাতে লাফাতে মাটিতে পরে মারা যায়। সুতারগাঁও গ্রামের শিশির মোহন দাস বলেন, গোচারণ ভূমির সংলগ্ন সরকারী জায়গার সবগুলো ডোবা দখল করে জাল দিয়ে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন চাতলপাড় গ্রামের আবু সালাম। দুই গ্রামের গবাদি পশুগুলোকে মাঠে পানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেই। কিছুদিন পুর্বে মাটি কেটে সৃষ্ট নতুন ডোবাটিও দখলে নিয়ে বিষ প্রয়োগ করেন তিনি, আজ সকালে আমাদের গ্রামের পঞ্চায়েতি রাখালরা গরু নিয়ে হাওরে যাওয়ার পথে কয়েকটি গরু সেই পুকুরের পানি পান করার কিছুক্ষনের মধ্যে একে একে ১১টি গরু মারা যায়। চাতলপাড় গ্রামের সুজন খান বলেন, গরু মারা যাওয়ার দৃশ্য দেখে রাখালরা চিল্লাচিল্লি শুরু করলে গ্রামের লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এসময় করোনা ভাইরাসে হাওরে একের পর এক গরু মারা যাচ্ছে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। গ্রামের মহিলারা বাচ্চাদের ঘরে আটকে রেখে দরজা জানালা বন্ধ করে দেন। পুরুষরা কেউ কেউ এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান কিছু গরু মওে পড়ে আছে, কিছু গরু মাঠে পড়ে ছটপট করছে। লোকজন থাকা অবস্থায়ই একেএকে দুই গ্রামের ১১ টি গরু মারা যায়। আবু সালাম বলেন, গ্রামের পঞ্চায়েতের আদেশে রাস্তায় মাটি তোলার জন্য পুকুরটি আমি শুকিয়ে দিয়েছি, মাটি কাটার পরে তাদের অনুমতি নিয়েই সেখানে মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য চুন প্রয়োগ করা হয়েছে, কোন ধরনের বিষ দেয়া হয়নি। উপজেলা পানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এফ এম বাবরা হ্যামলিন ডোবার পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়েছে জানিয়ে বলেন, গরুগুলো কি কারণে মারা গেছে তা সঠিক করে বলা সম্ভব হচ্ছেনা, নমুনা সংগ্রহ করে টেষ্টের জন্য পাঠাবো, রিপোর্ট আসার পরই তা বলা যাবে। তবে ধারণা করছি গরুগুলো বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম বলেন, পুকুরের পানি সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে বিষ দেয়া হয়েছে কিনা তা জানার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। রিপোর্ট আসলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। দিরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম নজরুল জানান, যেহেতু ১১টি গরুর মৃত্যুর ধরণ এক রকম, তাই মৃত দুটি গরু ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট আসার পরই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।