জাতীয়

করোনা পরিস্থিতি ও চৈত্রের নিদানে খাদ্য সংকটে দিরাইয়ের নিম্নআয়ের মানুষ

মোশাহিদ আহমদ : করোনা পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত দিরাই উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছেন তীব্র খাদ্য সংকটে। হাওর এলাকার চিরপরিচিত চৈত্রের নিদানের (অভাব) সাথে করোনা পরিস্থিতিতে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। উপজেলায় যেটুকু সরকারি সহায়তা পাওয়া গেছে সেটাকে অপ্রতুল না বলে অতি নগণ্য আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে সহায়তার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে শীঘ্রই।

কদিন আগের ব্যস্ত কর্মচঞ্চল পৌর শহরটিতে যেন রীতিমতো ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। পৌর শহরের পাশাপাশি উপজেলার হাটবাজারগুলোতেও একই দশা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনায় ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকান ব্যতিত রেস্টুরেন্ট, সেলুনসহ সবধরণের দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি দপ্তর, সকল গণপরিবহন, মার্কেট সবকিছু বন্ধ রয়েছে। যেন অঘোষিত লকডাউন। এঅবস্থায় কাজকর্ম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় নিম্ন আয়ের লোকজন। শুধু পৌর শহরই নয় উপজেলাজুড়েই খাদ্য সংকটে রয়েছেন শ্রমিক, দিনমজুর, ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানি, রিকশাচালক, সিএনজি-অটোরিকশাচালক, পেশাদার মোটরসাইকেল চালক, ভ্যান-টেলাগাড়ি চালক, হোটেল কর্মচারী, রাজমিস্ত্রী। ‘দিন আনে দিন খায়‘ লোকগুলো খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। পত্রিকা হকার ঝন্টু বর্মন বলেন, সংবাদপত্র আসা বন্ধ রয়েছে, এঅবস্থা চলতে থাকলে পেট চলবে কি করে। রিকশা চালক সুরুজ আলী বলেন, পেটতো ভাইরাস বুঝে না, তাই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু কোন যাত্রী নেই। ৬ ঘন্টা বাজারে আছি ৭০ টাকা রোজগার হইছে। ক্ষুদ্র চা দোকানি রুপক দাস বলেন, ৪ দিন ধরে দোকান বন্ধ, এভাবে চললে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরবো।

এছাড়া হাওরপাড়ে যুগযুগ ধরে চলে আসা চৈত্রের নিদান এ কষ্টকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। চৈত্র মাসে বেশীরভাগ কৃষকের ঘরের ধান ফুরিয়ে যাওয়ায় অতীতে এসময়টাতে অতিরিক্ত কাজকর্ম করে পরিবারের খরচ নির্বাহ করতেন কৃষকরা আর অপেক্ষা করতেন বৈশাখে নতুন ধান গোলায় তোলার। কিন্তু এবছর করোনা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। অঘোষিত লকডাউনের কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন কাজে যেতে পারছেন না। হাতে যা ছিল তাও শেষ। নতুন করে রোজগার করতে না পারায় খেয়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মানুষগুলোর কাছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলার বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা যেটুকু এসেছে, সেটাকে অপ্রতুল না বলে অতি নগণ্য আখ্যা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন।

জানা যায়, সম্ভাব্য করোনা পরিস্থিতি তাৎক্ষনিক মোকাবেলায় কর্মহীন দরিদ্র অসহায় প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে উপজেলার প্রতি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় দেড় মেট্রিক টন চাল, আলু ও ডাল কিনতে নগদ ১০ হাজার টাকা সরকারি সহায়তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলার ১ টি পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ১৫০ জন করে এই সহায়তা পেয়েছেন।

পৌর কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপ বলেন, সরকারিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাপ্ত সহায়তা অপ্রতুল। আমার ওয়ার্ডে নুন্যতম ২ শতাধিক দিনমজুর শ্রমিক রয়েছেন, দিতে পেরেছি ১৫ জনকে। সরকারি সহায়তা বৃদ্ধির আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যুবক ও তরুণরা মিলে একটা ফান্ড গঠন করেছি। আশা করি এর মাধ্যমে ওয়ার্ডের শতাধিক পরিবারকে চাল ডাল প্রদান অব্যাহত রাখতে পারবো।

দিরাই পৌরসভায় ৩০ শতাংশ শ্রমজীবি রয়েছে জানিয়ে পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাপ্ত সহায়তা পৌরসভার ১৫০ টি পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু ও ১ কেজি করে ডাল বিতরণ করা হয়েছে। শীঘ্রই সহায়তা বাড়ানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রতি ওয়ার্ডে ৫০ জন করে তালিকা সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সফি উল্লাহ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাপ্ত সহায়তা ইতোমধ্যে উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এই সহায়তা অপ্রতুল বিবেচনায় নিয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডে ৫০ জন করে তালিকা তৈরীর কাজ চলেছে। শীঘ্রই এই সহায়তা প্রদান করা হবে।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap