জাতীয়সারাদেশ

লিবিয়ার ভয়ংকর মানবপাচারকারী সিলেটের রফিক

কলম শক্তি ডেস্ক ঃ লিবিয়ার ‘ভয়ঙ্কর’ মানবপাচার চক্রের সদস্য সিলেটের বিশ্বনাথের রফিক। সব জেনে-শুনেই হাসিমুখে সিলেটের তরতাজা যুবকদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে। এরপরও লিবিয়া পৌছালে জিম্মি করা হয় যুবকদের। বন্দি থাকা স্বজনের মৃত্যু ঠেকাতে সিলেটের রফিকের হাতেই তুলে দেওয়া হয় মুক্তিপণের টাকা। সেই টাকা রফিক হুন্ডির মাধ্যমে পাঠায় লিবিয়া। ওখানে রয়েছে তার ছেলে পারভেজ। সেও লিবিয়ার মানবপাচারকারী মাফিয়াদের একজন। তার মাধ্যমেই বাংলাদেশে মানবপাচার চক্রের গড়ে তোলেছে রফিক। গত বছরের মে মাস। দালাল রফিকের মাধ্যমে স্বপ্নের দেশ ইতালীর পথে গিয়ে ভুমধ্য সাগরে ডুবে মারা গেছে অনেক সিলেটী।- এই ঘটনার পর সিলেটের বিশ্বনাথের দালাল রফিকের সন্ধান মিলে। মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। পরপর ৮টি মানবপাচার মামলা হলে সিলেট ছেড়ে পালায় রফিক। ওই সময় আইন শৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হন্য হয়ে খুজলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে- মানবপাচার চক্রের আরেক সদস্য রফিকের মেয়ে পিংকি গ্রেপ্তার হয়েছিলো। গ্রেপ্তারের পর পিংকির কাছ থেকে মিলেছে রফিক, পারভেজ ও পিংকির মানবপাচারের নেটওয়ার্ক। এখন তার সবকিছুই তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির জানা। ঈদের আগে জামিন পেয়েছে পিংকি। সম্প্রতি বাড়িতে এসেছিলেন রফিকও। বাড়িতেই ঈদ কাটার বলে এলাকার লোকজন জানান। সোমবার বিকেলে নিজ বাড়ি থেকেই র্যা বের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে সে। এরপর র্যা ব সদস্যরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এক বছর পলাতককালে ঢাকায় ছিলো সে। সেখানে বসেই দেশজুড়ে মানবপাচারের নেটওয়ার্ক গড়েছে। এখন স্বজন হারানো শোকার্ত পরিবারগুলোর চোখ সরছে না তাদের উপর থেকে। তাদের গতিবিধি দিকেও তারা নজর রাখছে। আর যাতে সিলেটের কোনো মায়ের কোল খালি না হয় সে কারনে তাদের এই নজরদারি। তেমনকি একজন ভুক্তভোগি বিশ্বনাথের রেজাউল ইসলাম রাজু। ঠিক এক বছর আগে রফিক ও ছেলে পারভেজের সিন্ডিকেটের কবলে ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম খোকনকে হারিয়েছেন তিনি। ভুমধ্যসাগরের চিরতরে হারিয়ে গেছে খোকন। রাজু মানবজমিনকে জানান- এক বছর কারাগারে থাকার পর পিংকি মুক্তি পেয়ে গেছে। সে এখন বাড়িতে আছে। এখন রফিক আটক হয়েছে। তিনি বলেন- আমরা জান ও মাল সব হারালাম। এখন বাকী শুধু বিচার। এই বিচার হলেই আমরা খুশী হবো। আমরা চাই- সিলেটের আর কোনো মায়ের কোন যেনো খালি না হয়। স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগিরা ইতিমধ্যে রফিক ও তার পরিবারের মানবপাচারের অন্য তথ্যর খুজ পেয়েছেন। মিলেছে মানবপাচারের ভয়ঙ্কর তথ্য। বিশ্বনাথের রামধানা এলাকার কাঠলী পাড়া। ওই গ্রামের বাসিন্দা রফিক আহমদ। ৮ বছর আগে নিজ ছেলে পারভেজকে লিবিয়া পাঠান রফিক। সেখানে ওখানে গিয়ে থিতু হয়ে যায়। মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। ওখানে বাংলাদেশের নেটওয়ার্কের পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে পারভেজ। দেহরক্ষী নিয়ে ঘুওে সে। সিলেট থেকে পাচার করা মানুষ গেলে সে প্রায়ই যায়। দেখা সাক্ষাৎ করে। জিম্মিকালে পরিবারকে টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করে। ছেলের সূত্র ধরে সিলেটে মানবপাচারের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ঘটায় রফিক। প্রথমে সে মানুষজন জোগার করতো। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক মানুষ সংগ্রহ করতো। পরে সে মানুষ নিয়োগ করে। এলাকায় এলাকায় তার নিয়োজিত এজেন্টরা এই কাজ করতো। আর বিদেশে পাচারের বিষয়টি দেখভাল করতো মেয়ে পিংকি। তার একাউন্টেই কোটি কোটি লেনদেন হয়। ভুমধ্যসাগরের নৌকাডুবে সিলেটী যুবকদের মৃত্যুর ঘটনায় পিংকির বিরুদ্ধেও ৬ মামলা হয়। এসব মামলায় পিংকি গ্রেপ্তার হয়। এরপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার তিনটি ব্যাংক একাউন্ট খুজে যান। এর ব্রাক ব্যাংকের একাউন্টে থাকা ৩২ লাখ টাকা খোজ পান। গ্রেপ্তারের আগেই পিংকি অগ্রনী ব্যাংকের শাখা থেকে ১ কোটি ৪৭ টাকা সরিয়ে ফেলে। পুলিশ জানায়- ভুমধ্য সাগর ট্র্যাজেডির পর রফিকের পর বিরুদ্ধে নতুন করে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে বিশ্বনাথ থানায় মামলা করেছিলেন মারা যাওয়া খোকনের ভাই রাজু। এছাড়া হবিগঞ্জে বানিয়াচংয়ে রানা নামে আরো এক জন মামলা করেন। এর বাইরে জালালাবাদ থানা, দক্ষিন সুরমা থানা ও গোলাপগঞ্জ থানা সহ সিলেটের আরো কয়েকটি থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এসব মামলা দায়ের প্রাক্কালেই সিলেট থেকে পালিয়েছিলো রফিক। ফলে ওই সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রফিকের খোজ পায়নি। সম্প্রতি সময়ে বাড়ি এলে গতকাল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মানবপাচারের নির্মম ঘটনায় টাকাওলা বনে যাওয়া রফিক নিজ গ্রামে বানিয়েছে পাকা বাড়ি। দুটি বাস, দুটি মাইক্রোবাস ও তিনটি সিএনজি অটোরিক্সার মালিক সে।

সূত্র – দৈনিক মানবজমিন

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap