জাতীয়

মেয়াদ শেষেও শেষ হয়নি দিরাইয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০ ভাগ কাজ

প্রকল্পের গম নেত্রকোনায় কালোবাজারে বিক্রি

হাবিবুর রহমান তালুকদার ঃ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র কাজ না করেও বরাদ্দকৃত গমের সিংহভাগ নেত্রকোনায় কালোবাজারে বিক্রিকালে জব্দ করা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলার মদন থানা পুলিশের অভিযানে গম জব্দে মামলাটি বর্তমানে নেত্রকোনা ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। মাস্টার রোল না পেয়েও একের পর এক ডিও প্রদান করে আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি রফিনগর ইউপি চেয়ারম্যান রেজোয়ান খান দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি-অপকর্ম চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত জুন মাসের ২৫ তারিখ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু শেষ হয়নি প্রকল্পের ১০ ভাগ কাজও। দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের বাংলাবাজারের নিকট পিয়াইন নদীর উত্তর পাড়ে সরকারী খাস জায়গার ১০ একর ভূমিতে ৪শ’ পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যে মাটি ভরাটের জন্য ৯শ’ ৯৭ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম কিস্তিতে প্রদান করা হয় ১শ’ ২৫ মেট্রিক টন গম। বরাদ্দকৃত এই গমের কোন মাস্টার রোল না পেয়েই পুনরায় দ্বিতীয় কিস্তিতে আরও ১শ’ ২৫ মেট্রিক টন গমের জন্য ডিও প্রদান করে উপজেলা প্রশাসন। ডিও প্রদানের দুমাস পর দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফি উল্লা প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের কাজ চলছিল ঢিমেতালে। ছিল না প্রশাসনের সঠিক নজরদারী। এদিকে, গত জুন মাসে প্রকল্প এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত, তখন মাটি ভরাট কাজের মেজারমেন্ট করেন দিরাই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। মেজারমেন্টে দেখা যায়, আড়াইশ’ মেট্রিক টন গম বরাদ্দে মাত্র ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার কিউবিক মাটি প্রকল্প এলাকায় কাটা হয়েছে। যা মোট কাজের ৯ শতাংশ। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রকল্পের সভাপতি রফিনগর ইউপি চেয়ারম্যান রেজোয়ান খানকে গত ১৬ জুলাই থেকে পরবর্তী ৯০দিনের মধ্যে ৪৪ লক্ষ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার আদেশ প্রদান করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান রেজোয়ান খান উপজেলা প্রশাসনের দেয়া আদেশের কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি আদেশ পত্রের জবাব দেবেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কারণ মাটি ভরাটের কাজ শুরুর পর থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে মেজারমেন্ট নেয়ার কথা বললেও তিনি আসেননি। প্রকল্পে না এসে তিনি কেবল অর্থ দাবি করেন। অবশেষে বন্যার মধ্যে মেজারমেন্ট করা হয়েছে-যা কোন অবস্থাতেই সঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফি উল্লা বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান রেজোয়ান খানকে কাজে অনিয়মের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে টাকা ফেরৎ না দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে এবং বন্যার পরই প্রকল্পে নতুন প্রকল্প চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হবে। এদিকে, নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলায় দিরাইয়ের আশ্রয়ন প্রকল্পের গম জব্দ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুতিয়াখালী বাজারের পাশ থেকে গম বোঝাই ৪টি ট্রাক ও একটি খালি ট্রাক আটক করে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মদন থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক মোসারফের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করেন। গমের প্রকৃত মালিক না পাওয়ায় পুলিশ আটককৃত ৫জন চালককে নেত্রকোনা আদালতে প্রেরণ করেন। আটককৃতদের ভাষ্য অনুযায়ী পুলিশ মদন উপজেলার ঘাটাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বেলাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে বেলাল আটককৃত গম দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজোয়ান খান বিক্রির জন্য পাঠিয়েছেন বলে জানান। মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রমিজ উদ্দিন জানান, ২ ফেব্রয়ারি বিশেষ নিরাপত্তা আইনে মদন থানায় আটক ৫জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি নেত্রকোনা ডিবিতে তদন্তাধীন রয়েছে (মামলা নং-২/২০২০)। ডিবি ইন্সপেক্টর নাজমুল হক জানান, জব্দকৃত গম মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রমিজ উদ্দিন নিলামে বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে জমাদান করেছেন। এদিকে, সম্প্রতি নেত্রকোনা ডিবি পুলিশ দিরাই খাদ্য গুদামে এসে আশ্রয়ন প্রকল্পের চেয়ারম্যান রেজোয়ান খানের বিভিন্ন সময়ের গম উত্তোলনের তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন দিরাই খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) হিমেল চন্দ্র সরকার।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap