জাতীয়

দিরাইয়ে সড়ক সংস্কারের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ

বিশেষ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সড়ক সংস্কারের নামে একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল আহমদ ছইল মিয়ার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ ওই চাঁদাবাজ চক্র কৌশলে টোল আদায়ের নামে প্রকাশ্যে রশিদের মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করে যাচ্ছে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে গত দুই মাসে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। তবে আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট সোহেল আহমদ ছইল মিয়া বলছেন, চাঁদাবাজি নয়, জগদল, মাটিয়াপুর, করিমপুর ও চান্দপুর এই চার গ্রামের ফান্ড নিজস্ব ফান্ড থেকে সড়ক সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করে দেয়া হয়েছে, এই টাকা উত্তোলন করতে গ্রামবাসির পক্ষ থেকে আমাদের কয়েক জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই, সড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে কিছু টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সংস্কারের জন্য কিছু টাকা দিয়েছেন কিন্তু টোল আদায় এবং চাঁদা উত্তোলনের জন্য বলা হয়নি। সরেজমিন দেখা যায়, নবনির্মিত কালনী ব্রীজের পুর্বপাশে দিরাই-জগদল সড়কের চান্দপুর গ্রাম সংলগ্ন স্থানে মাটি দিয়ে গতিরোধক তৈরী করে ‘টোল আদায়ের রশিদ’ এমন টোকেন দিয়ে সবধরণের যানবাহন থেকে নির্বিচারে চাঁদা আদায় করছেন চান্দপুর গ্রামের নিতাই দাসের ছেলে অঞ্জু দাস। তার সাথে কথা বললে সে জানায়, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মাটিয়াপুর গ্রামের সোহেল আহমদ ছইল মিয়া, বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জগদল গ্রামের মোখলেছুর রহমান লাল মিয়া, বিএনপি নেতা করিমপুর গ্রামের রুবেল মিয়া ও চানপুর গ্রামের বাবুলাল দাস আমাকে টোল আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদের নির্দেশে রশিদ মোতাবেক প্রতিটি মোটের সাইকেল ১০ টাকা, সিএনজি ১৫ টাকা, ইজিবাইক ১০টাকা, প্রাইভেট কার-লাইটেস ২০ টাকা, মালবাহী ট্রলি ৫০টাকা, যাত্রীবাহী ট্রলি ২০ টাকা ও মালবাহী পিকআপ থেকে ৫০ টাকা করে টাকা নিচ্ছি । চান্দপুর গ্রামের জীবন সুত্রধর জানান, আমি এর বিরোধীতা করেছি, কিন্তু গ্রামের দোহাই দিয়ে এসব করা হচ্ছে, উত্তোলনের অর্ধেক টাকা নিচ্ছেন অঞ্জু দাস আর প্রতিদিন একশ টাকা করে গ্রামের মন্দিরে দেয়া হয় শুনেছি। এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন জানান, প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে সরকারি রাস্তায় টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এলজিইডির ১৫ কিলোমিটার এই রাস্তা নির্মানের সমীক্ষা শেষ হয়েছে, কাজ করার জন্য প্রকল্পভুক্ত হয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কালনী ব্রীজ হতে চান্দপুর-করিমপুর-মাটিয়াপুর-জগদল-হোসেনপুর-কলকলিয়া বাজার পর্যন্ত রাস্তায় ২.৬ কিলোমিটার ফ্লাইওভার, ৭-৮টি ব্রীজ নির্মাণে সরকারের সাড়ে পাঁচশত কোটি টাকা ব্যয় হবে। যারফলে ফলে দিরাইয়ের সাথে জগন্নাথপুর উপজেলার সারা বছর নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। স্থানীয়রা জানান, কথিত ওই চক্র রাস্তা সংস্কারের কথা বলে গ্রামবাসীর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে দেড়লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছে, এখন টোল আদায়ের নামে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকা উত্তোলন করে ভাগভাটোয়ারা করে নিচ্ছে। ফাতেমানগর গ্রামের ট্রলি চালক আউয়াল মিয়া বলেন, গ্রাম্য বাজারে মালামাল নিয়ে অনেক ট্রলি প্রতিদিন আসা যাওয়া করছে, আমি সাধারণ শ্রমিক, রাস্তা আটকিয়ে ৫০টাকা রাখা হয়েছে এই দেখুন রশিদ। স্থানীয় ইউপি সদস্য সুকেশ বর্মন জানান, আমি এই ওয়ার্ডের মেম্বার হলেও আমাকে কোন কিছু জানানো হয়নি, শুনেছি গ্রামবাসির দোহাই দিয়ে রাস্তা সংস্কারের নামে টোল আদায় করা হচ্ছে, রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি এমপি মহোদয়কে অবগত করলে সমাধান হত কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের পাশ কাটিয়ে স্থানীয় কয়েক নেতার স্বার্থে এ ধরনের কাজ আমি সমর্থন করিনা। জগদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিবলী আহমদ বেগ জানান, কালনী নদীর উপর ব্রীজ হওয়ায় আমার ইউনিয়নসহ পুর্বাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ মালামালসহ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়ত করছে, সরকারি রাস্তায় এ ধরনের চাঁদাবাজি আমার জানা নেই, এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সফি উল্লাহ জানান, আওয়ামীলীগ নেতা সোহেল সাব আমাকে এই রাস্তা উদ্বোধনের কথা বলছিলেন কিন্তু চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই এখন আপনার কাছ থেকে শুনলাম। দিরাই থানার ওসি কে এম নজরুল জানান, রাস্তা সংস্কারের নামে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আমি অবগত নই, তবে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করার সুযোগ কারো নেই,বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে কালনী নদীর উপর ব্রীজ নির্মান করা হয়। ২০১২সালে এই ব্রীজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক রেলমন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ২০১৬ সালের শেষের দিকে জনসাধারনের চলাচলের সুবিধার জন্য ব্রীজটি চালু করে দেয়া হলেও অনুষ্ঠানিকভাবে ব্রীজটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap