সারাদেশ

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অকারণে বদলি: পরিকল্পনামন্ত্রীর ক্ষোভ

বিশেষ সংবাদদাতা :: সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমানকে হঠাৎ অকারণে বদলির ঘটনায় ক্ষোভ ও বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। প্রাথমিক শিক্ষার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় সুধীজন ও শিক্ষাবান্ধব সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে একজন সৎ ও নির্লোভ কর্মকর্তার বদলির বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি এই ক্ষোভের কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা থাকতে চাইলে আমি মন্ত্রণালয়কে বলে রাখার ব্যবস্থা করব। পিছিয়েপড়া আমার হাওরজেলার শিক্ষার উন্নয়নে তার মতো সৎ ও দক্ষ অফিসার আমাদের প্রয়োজন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান সুনামগঞ্জে আর থাকতে চাননা। বদলি হয়ে তার বাড়ির কাছে পোস্টিং হওয়ায় তিনি সেখানেই যোগদান করতে চান। জানা গেছে গত দেড় বছর আগে সুনামগঞ্জে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে এখানে আসেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সবচেয়ে সৎ হিসেবে পরিচিত নজরুল গবেষক ও বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী মো. জিল্লুর রহমান। সাংস্কৃতিকমনা এই শিক্ষা কর্মকর্তা এখানে এসেই হাওরের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে যুগোপযোগী নানা পদক্ষেপ নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষসহ সুধীজনদের প্রশংসা কুড়ান। সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজ ও অফিসের সবাই তার ব্যক্তিগত সততা ও কর্মতৎপরতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে আপন করে নেন। তিনি তার ব্যক্তিগত টাকায় অফিসের পর্দাসহ গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামও ক্রয় করেন। অতিথিদের চাপানের আপ্যায়নও করাতেন নিজের পকেটের টাকায়। প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই দশকে তার মতো এমন সৎ অফিসার সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হয়ে আসেননি। অন্যান্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তিনি ছিলেন এসব থেকে মুক্ত। গত দেড় বছরে তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ছিলনা। জানা গেছে শহরের একটি স্কুলের এক বেপরোয়া সহকারি শিক্ষক গত কয়েক বছর ধরে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চলছেন। নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে আলোচিত। তার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষতম কর্মকর্তার দহরম মহরম আছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে বিশেষ সরব আলোচনা আছে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের সকল শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, এলাকাবাসী এবং ম্যানেজিং কমিটিও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষাক কর্মকর্তা, বিভাগীয় পরিচালক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ প্রাথমিক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা শৃঙ্খলা ভঙ্গের সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন জমা দেন। ওই শিক্ষক তার বিরুদ্ধে যাতে কোন তদন্ত না হয় সেজন্য তিনি বিভিন্ন মহল দিয়ে তদবিরও করান। কিন্তু কর্তৃপকক্ষ নিরপেক্ষ ও সুষ্টু তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্দ হয়ে বেনামে মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে আবেদন করেন বলে জানা গেছে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বদলি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানানোর পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সততার কারণে শীর্ষ জনৈক কর্মকর্তা তাকে বিষয়টি খুলে বলে তাকে পছন্দের যে কোন স্থানে বদলি হওয়ার অনুরোধ করেন। জবাবে তিনি যে কোন স্থানেই সরকারি বিধি মেনে বদলি হতে চান বলে জানিয়ে দেন। পরে তাকে তার এলাকায়ই হেড অফিসে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন রশিদ বলেন, সততা ও কাজের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষক সমাজের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন স্যার। তিনি আমাদের অবহেলিত হাওরের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে যুগোপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে অধিদপ্তরেও প্রশংসিত হয়েছিলেন। স্যারের হঠাৎ বদলির আদেশ আমাদের শিক্ষক সমাজের সবাই হতাশ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, কি কারণে আমাকে বদলি করা হয়েছে জানিনা। তবে সুনামগঞ্জের শিক্ষক সমাজ ও সুধীজন আমার বদলিতে নাখোশ হয়ে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই আমাকে বদলি ফেরানোর অনুরোধ করেছেন। আমি সরকারি আদেশের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে চাই। বাকি জীবন সততার সঙ্গেই কাজ করে অবসরে যেতে সকলের দোয়া কামনা করেছেন তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৎ ও আদর্শবান কর্মকর্তা বলে অনেকেই আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। হঠাৎ কেন তাকে এভাবে অকারণে বদলি করা হলো আমার কাছে বিষ্ময়কর মনে হয়েছে। তিনি যদি বদলি না হয়ে এখানে থাকতে চান তাহলে আমি তাকে রাখার জন্য মন্ত্রণালয়ে বলব। আমার সুনামগঞ্জের জন্য এমন চৌকষ ও সৎ কর্মকর্তার প্রয়োজন।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap