সারাদেশ

এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় দিরাইয়ের রবিউল সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিউজ ডেস্ক ঃ সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী কর্তৃক বিবাহিত তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দিরাই নগদীপুর গ্রামের রবিউলসহ মোট ৯ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টার দিকে এসএমপির শাহপরাণ থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ২১। নির্যাতিত ওই তরুণীর স্বামী মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখপূর্বক আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে শাহপরাণ থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহপরাণ থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম। মামলার আসামীরা হলো এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর, শাহ রনি, অর্জুন, মাহফুজ, রবিউল ও তারেক। তারা সবাই সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে। এদিকে অভিযুক্তদের ধরতে রাতভর অভিযান চালিয়ে সাইফুরের বাসা থেকে বেশ কিছু দেশিও ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে সিলেটের এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে দীর্ঘদিন কলেজে কমিটি না থাকায় তাদের কোন পদ-পদবী নেই। কিন্তু কলেজের রাজনীতিতে এসব নেতারা সক্রিয় ছিলেন। এসব নেতা-কর্মীরা মূলত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী। এবং সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলামের সাথে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত নেতাকর্মীরা রাজনীতি করতেন বলে জানা গেছে। একাধিক প্রোগ্রামে নাজমুল ইসলামের সাথে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের ছবি রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহপরান (র.) থানার এক এসআই রাত পৌনে ৩ টায় সিলেট ভয়েসকে জানান, শাহ মাহবুবুর রহমান রণি, মাহফুজুর রহমান মাসুম, সাইফুর রহমান, অর্জুন, রবিউল ও তারেক নামের ৬ জনের সম্পৃক্ততার বিষয় আপাতত জেনেছি। ওসি স্যারসহ অভিযানে আছি। কিন্তু তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এদিকে অভিযুক্ত শাহ মাহফুজুর রহমান রনির বাড়ি হবিগঞ্জে। সে এমসি কলেজে ইংরেজিতে মাস্টার্সে অধ্যয়রত। একই শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। সাইফুর রহমানের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জে এবং তারেক জগন্নাথপুরের বাসিন্দা। তারা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রঞ্জিত সরকার বলয়ের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা বলেও জানা গেছে। এ ব্যাপারে রঞ্জিত সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন। এদিকে তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের ধরতে সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত এক ধর্ষকের বাসা থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি রামদা, দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন শাহপরাণ থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম। এর আগে শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে এক তরুণীকে গণধর্ষণ করেছে মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। অভিযুক্ত এসব কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ধর্ষিত তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজের ঘুরতে আসেন। ঘুরার এক পর্যায়ে রাত ৮ টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের গেইটের বাইরে বের হন। এসময় কয়েকজন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চান। এতে তরুণীর স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধোর শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে তরুণী ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের তিন-চারজন নেতাকর্মী তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এসময় তাদের সাথে থাকা ৯০ টি মডেলের একটি কারও ছিনিয়ে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে কারটি তাদের জিম্মায় নেয়। এবং তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে প্রেরণ করে।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap