আলোকিত নারী : ড. জয়া সেনগুপ্তা এম.পি
মোশাহিদ আহমদ :: ড. জয়া সেনগুপ্তা। সুনামগঞ্জের দিরাই শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মিণী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিখ্যাত হয়ে উঠার অন্তরালের গল্পের কারিগর তিনি। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যসহ না ক্ষেত্রে এক আলোকিত নারী ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি। বহুগুণে গুণান্বিত এই গুণি মানুষ সম্পর্কে অনেকেই তেমন একটা জানেন না। কেননা সবকিছু ছাপিয়ে ‘সুরঞ্জিত পত্নী’ এই পরিচয়ই তাঁর জীবনে মুখ্য হয়ে উঠে। কলম শক্তি ডটকম পাঠকদের জন্য ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপির সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরা হলো।
ড. জয়া সেনগুপ্তা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩ সালে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা সদরে এক বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গুরুদাস বসু ও মাতার নাম জ্যোৎস্নাময়ী বসু। গুরুদাস বসু পেশায় আইনজীবি ছিলেন। দুই বোন, এক ভাইয়ের সংসারে জয়া সেনগুপ্তা ছোট মেয়ে। তাঁর বড়বোন গৃহিনী। একমাত্র ভাই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে অবসর গ্রহণ করার পর বর্তমানে আমেরিকার সুপ্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম.আই.টি’তে অধ্যাপনারত। দেশ স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭২সালের ৬ মার্চ ভাটি বাংলার প্রখ্যাত প্রবাদ পুরুষ, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাথে বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হন তিনি। বৈবাহিক জীবনে তিনি এক পুত্র সন্তানের জননী। পুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। জয়া সেনগুপ্তা ভারতের কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠিত স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি ভাঙ্গা উপজেলায় (তৎকালীন ভাঙ্গা থানা) স্কুল-কলেজ না থাকায় প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ম্যাট্রিকুলেশন ও ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় পাশ করেন। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ডিগ্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রী হিসেবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি বারো বছরের অধিক দু’টি কলেজে অধ্যাপনা করেন। এরপর স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্র্যাকে পনের বছরের অধিক শিক্ষা বিভাগে সুনামের সাথে কাজ করে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষায় ব্রাক বিশ্বব্যাপী যে সফলতা অর্জন করেছে ওই বিভাগের প্রধান হিসেবে সেটার কৃতিত্বের সিংহভাগ জয়া সেনগুপ্তার। এসময় তিনি ত্রিশটির অধিক শিশু-কিশোরদের জন্য বই রচনা করেন। ব্র্যাক-এ কর্মরত অবস্থায় তিনি নেপাল, ভারত, ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন। এছাড়াও তিনি জাপান, আমেরিকা, সিঙ্গাপুরেও ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান ও দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য তাঁর স্বামী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রয়াণের পর ৩০ মার্চ ২০১৭ সালের উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে যোগদান করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যপদ ছাড়াও তিনি কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি, জেলা আওয়ামী লীগ এবং জেলা কারাগার এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গান করা, গান শোনা, বেহালা বাজানো ও রান্না করা তাঁর প্রিয় শখ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত সহজ সরল ও সত্যনিষ্ঠ জীবনের অধিকারী।