জাতীয়

দিরাই উপজেলা যুবলীগ : এক সদস্যের কমিটিতে ৫ বছর

মোশাহিদ আহমদ :: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা যুবলীগের ১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও দীর্ঘদিনে তা আর হয়ে উঠেনি। উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন কমিটিও মেয়াদোর্ত্তীণ। নেতৃত্ব শুন্যতায় স্থবির হয়ে আছে যুবলীগের কার্যক্রম। এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি রঞ্জন রায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর যুবলীগের শীর্ষ পদটি আকঁড়ে আছেন। এতে ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা হচ্ছেন বঞ্চিত, এমনটাই অভিযোগ দুই ভাগে বিভক্ত উপজেলা যুবলীগ নেতাকর্মীদের।

সূত্রমতে, বিগত ২০১৬ ইং সনের ১০ মার্চ দিরাই বিএডিসি মাঠে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট বেলাল আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফজলুল হক আতিক ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি ব্যারিষ্টার এম. এনামুল কবীর ইমনের উপস্থিতিতে উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে রঞ্জন রায়ের নাম ঘোষণা করেন ফজলুল হক আতিক। সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ প্রার্থী থাকায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। এরপর কেটে গেছে ৫ বছর, আজো হয়নি পুর্ণাঙ্গ কমিটি।

বিগত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন রঞ্জন রায়। নির্বাচনে সুরঞ্জিত অনুসারী দুই প্রার্থী, নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীক নিয়ে রঞ্জন রায় উভয়েই পরাজিত হয়। অপর দুই প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হলেও তাঁরা সুরঞ্জিত বলয়ের বাইরের নেতা ছিলেন। তাই সবকিছু ছাপিয়ে দলে প্রদীপ রঞ্জনের প্রতিদ্বন্ধীতার বিষয়টি বেশী আলোচিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী প্রদীপ রায়ের মাত্র ৬২ ভোটের ব্যবধানে পরাজয়ের কারণ হিসেবে রঞ্জন রায়ের প্রার্থীতাকেই দায়ী করা হয়। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় সাংসদ ড. জয়া সেনগুপ্তা ও দলের বৃহৎ অংশের নেতাকর্মীদের বিরাগভাজন হয়ে উঠেন রঞ্জন রায়। নির্বাচনে রঞ্জন রায়ের পক্ষে কাজ করায় কিছু নেতাও দলে গুরুত্ব হারান।

জানাযায়, বিগত ১৯৯৩ ইং সনে দিরাই ডাকবাংলাতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় উপনেতা আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফুলু সরকার, তৎকালীন যুব নেতা নাজমুল হোসেন চাঁন মিয়া কে সভাপতি ও নান্টু রায়কে সাধারণ সম্পাদক করে আনুষ্ঠানিকভাবে দিরাই উপজেলা যুবলীগের কমিটি গঠন করে দেন। ওই কমিটির সহসভাপতি ছিলেন রঞ্জন রায়। এরআগে শংকর নাগ ও আব্দুল মছব্বির দিরাই উপজেলা যুবলীগের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ১৯৯৪ ইং সনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ৯৬ ইং সনের ২৭ নভেম্বর সুরঞ্জিত অনুসারীরা আনুষ্ঠানিক সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা যুবলীগের কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিতে রঞ্জন রায়কে সভাপতি ও নুরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন বাদে ২০১৬ ইং সনের সম্মেলনে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন। এরমধ্যে দুইবার আহবায়ক কমিটি গঠন করা হলে আহবায়কের দায়িত্বেও ছিলেন রঞ্জন রায়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আওয়ামীলীগে যোগদানের পর যুবলীগসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনে কোন্দল দেখা দেয়। সামাদ গ্রুপ ও সেন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। তবে দলের বৃহৎ অংশ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অনুসারী ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর ক্ষমতার দ্বন্ধে কোন্দল চরম আকার ধারণ করে দলটিতে। সামাদ আজাদের আর্শীবাদপুষ্ট দলের একাংশের নেতাকর্মীরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেন। ফলশ্রুতিতে ৯৮ ইং সনের ১ নভেম্বর দিরাই বাজারে দুই পক্ষের প্রকাশ্য বন্দুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন নান্টু রায়। পরে ৩ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

দিরাই উপজেলা যুবলীগ নেতা ও পৌরসভার প্যানেল প্যানেল মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বলেন, টানা ২৫ বছর উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদ আকঁড়ে আছেন একই ব্যক্তি। সর্বশেষ টানা ৫ বছর এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতৃত্বেও তিনি। এরফলে নতুন নেতৃত্ব বিকশিত হচ্ছে না। ত্যাগীরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। নেতৃত্ব শুন্যতায় দিরাইয়ে উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। সর্বশেষ জাতীয় শোক দিবস, মুজিব শতবর্ষ ও প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সর্বত্র পালিত হলেও দিরাই উপজেলা যুবলীগের কোন কর্মসূচি ছিলো না। এটা আমরা যুবলীগ কর্মীদের জন্য হতাশার। উপজেলা যুবলীগকে সংগঠিত করতে নতুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

উপজেলা যুবলীগ নেতা ফারুক সরদার বলেন, ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগ করা রঞ্জন রায় কম হলেও ৩৫ বছর ধরে যুবলীগের রাজনীতি করছেন। আর কতোকাল তিনি যুবকই রয়ে যাবেন সেটাই এখন দিরাই যুবলীগ কর্মীদের প্রশ্ন।

এবিষয়ে রঞ্জন রায় বলেন, ৮৮ সালে জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের হাত ধরে যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। ৯৪ সালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের যোগদানের পর উনার নির্দেশনায় রাতদিন পরিশ্রম করে যুবলীগকে উপজেলায় একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। ৯৬ সালে উপজেলা যুবলীগের নেতৃত্বে আসি। ৫ বছর উপজেলা যুবলীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হবার কারণ সম্পর্কে রঞ্জন রায় বলেন, ২০১৬ সালের সম্মেলনে সভাপতি পদে আমি ছাড়া আর কোন প্রার্থী ছিলেন না। তবে সেক্রেটারী পদে ৬ জন প্রার্থী থাকায় শুধুমাত্র সভাপতির নাম ঘোষণা করে জানিয়ে দেয়া হয় শীঘ্রই পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে। এরপর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অসুস্থ্যতা এবং মৃত্যু, জামাত বিএনপির নাশকতা, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতির কারণে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন আটকে আছে। তবে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সুপারিশ করা কেন্দ্রে জমা দেয়া দিরাই উপজেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটি সক্রিয় রয়েছে। ইউনিয়ন কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও প্রতিটি ইউনিয়নে কমিটি রয়েছে। এসব কমিটির মাধ্যমেই আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগ আহবায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার বেশ আগেই কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ওই (এক সদস্যের) কমিটি হয়েছিল। পরবর্তীতে আমি চেষ্টা করেছি পুর্ণাঙ্গ কমিটি করে দেয়ার। তবে বিভিন্ন বাধা বিপত্তি আসায় কমিটি গঠন আটকে আছে। তিনি বলেন, দিরাইয়ে অনেক সম্ভাবনাময়, নেতৃত্ব দেয়ার মতো যুবক রয়েছেন। যারা একটি শক্তিশালী সংগঠন দাঁড় করাতে পারবেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর কেন্দ্রের নির্দেশনা নিয়ে দিরাইয়ে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের সমন্বয়ে যুবলীগের কমিটি গঠন হবে।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap