মোশাহিদ আহমদ, দিরাই :: সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভা নির্বাচন ২৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী আটজন। বড় দুই দলেই রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামী লীগ থেকে অংশ নিচ্ছেন দুইজন। দলীয় মনোনয়নে যুবলীগ নেতা বিশ্বজিৎ রায় নির্বাচন করছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া। বিএনপি থেকেও অংশ নিয়েছেন দুইজন। দলীয় প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন চৌধুরীর পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম। দুই দলেই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অস্বস্তিতে আছেন নেতা-কর্মীরা। এই পৌরসভায় প্রথমবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হবে।
দিরাই উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র জানায়, দিরাই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১২টি ভোটকেন্দ্রে ৬২টি কক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাই-বাছাইয়ে ৬ কাউন্সিলর প্রার্থী বাদ পড়েন। ১০ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১১ ডিসেম্বর। ভোট গ্রহণ করা হবে ২৮ ডিসেম্বর।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দিরাই ও শাল্লা উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জ-২ আসন। এই আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক রেলপথ মন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পত্মী ড. জয়া সেনগুপ্তা। তাঁর নির্বাচনী এলাকার মধ্যে দিরাই পৌরসভা। এই পৌরসভায় বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মোশাররফ মিয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দিরাই সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র বিশ্বজিৎ রায়। বিশ্বজিৎ রায়ও এমপি জয়া সেনগুপ্তার অনুসারী।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া বলেন, দুর্দিনে দলের জন্য রাজপথে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকবো। ‘দল থেকে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারকেরা ভুল ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। একজন মেয়র হিসেবে আমি করোনাকালে মাঠে ছিলাম, এখনো আছি। জনগণ ও পৌরবাসীর অনুরোধেই আমি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তৃনমূল নেতাকর্মীরা আমার সাথে আছেন। নির্বাচনে পৌরবাসী আমাকেই মূল্যায়ন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করছি। আমি দিরাই সরকারি কলেজ ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। তিনবার কাউন্সিলর ও দুইবার প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। ভোটারদের কাছে আমি জনপ্রিয়। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও আমি তাতে চিন্তিত নই। কেননা দিরাই আওয়ামীলীগ পরিবার নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ।’
এই নির্বাচনী এলাকায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পর আরেক জনপ্রিয় ব্যক্তি কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও এ আসনের সাবেক সাংসদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে সেন পরিবার ও নাছির উদ্দিন চৌধুরী সমর্থিতরাই মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকেন।
দিরাই পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইকবাল হেসেন চৌধুরী। তিনি দিরাই পৌর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। এরপরও যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
জানতে চাইলে দিরাই উপজেলা নির্বাচন ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে প্রার্থীদের ইভিএমে ভোট পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি। পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ও নির্বাচনী জনবহুল এলাকায় ইভিএমে ভোট নেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা ও হাতে-কলমে দেখানো হবে। আমরা ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে শতভাগ আশাবাদী।