হাওরে স্বপ্ন বুনছে কৃষক
মোশাহিদ আহমদ, দিরাই :: বীজতলায় চারা প্রস্তুত। হাওরের বুক থেকে অথৈ জলরাশি নেমে গেছে বেশ কয়েকদিন আগেই। জমিতে চাষ দেওয়ার কাজও শেষের দিকে। চারা রোপনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কৃষকরা। প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল এই একফসলি বোরো ধানের কচি চারা জমিতে লাগানোর ধুম পড়েছে গোটা উপজেলায়। মাঘ মাসের মাঝামাঝিতে বৃষ্টি পাবার আশায় সব কৃষক একসাথে জমিতে চারা রোপন শুরু করায় দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। সেই সাথে রয়েছে হালের সঙ্কট। তবে সমস্যা প্রকট নয় জানিয়ে এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কৃষি বিভাগ।
দিরাই উপজেলার সাধারণত পৌষের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত বীজতলা তৈরী ও পরিচর্যার উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা হয়। এরপর বীজতলা থেকে বোরো ধানের চারা জমিতে রোপন করা হয়। জাতভেদে কিছু ধানের চারা কিছুটা আগে থেকেই রোপন করা যায়। বীজতলা থেকে শুরু করে ধান কর্তনের উপযোগী হতে ১৪০ দিন সময় লাগে। তবে ব্রি-২৯ জাতের ধানের ক্ষেত্রে আরও ২০ দিন বেশী প্রয়োজন হয়। এবছর হাওরের পানি নামতে ৭ থেকে ১০ দিন বেশী সময় নিয়েছে। ধান কর্তনের সময়সীমাও পিছিয়েছে। তাই বোরো ফসলের জন্য আগাম বন্যার শংকা রয়েছে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
এ বছর কিছুটা দেরীতে ধানের চারা রোপন শুরু করেছেন কৃষকরা। সব কৃষক একসাথে চারা লাগানোর কাজ শুরু করে দেয়ায় দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ শ্রমিক প্রতি একর ৩ হাজার টাকা চুক্তিতে বোরো চারা লাগাচ্ছেন।
উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের বরাম হাওরের কৃষক বোরহান মিয়া জানান, ৪ একর জমিতে চারা লাগানোর জন্য জমি ও চারা প্রস্তুত। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে চারা লাগানো বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ভাই-ভাতিজা, ছেলেদের নিয়ে কিছু কিছু লাগাচ্ছি। ভাঙ্গাডহর গ্রামের শ্রমিক সুনীল দাস বলেন, প্রতি কেদার (৩০ শতাংশ) জমিতে ৯শ টাকা চুক্তিতে আমরা ৭ জন ধানের চারা রোপনের কাজ করছি।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে দিরাই উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ২৫০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চারা লাগানো হয়েছে। রোপনের বাকি কাজ আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, গত মৌসুমে উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ হাজার ৭৭৬ হেক্টর। ধানের বাম্পার ফলন ও দাম বেশী পাওয়াতে এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমি আবাদ হবে। তিনি বলেন, কৃষিকাজে আধূনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার আগের তুলনায় বেড়েছে। শতভাগ কৃষককে কৃষির আধূনিকায়তের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন ব্যয় অনেকটা হ্রাস করা সম্ভব।