জাতীয়

করোনায় চলে গেলেন গুণী সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান

কলম শক্তি ডেস্ক :: দেশের আইন সাংবাদিকতার বাতিঘর খ্যাত বিশিষ্ট সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান আর নেই। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। ডিসেম্বরের শুরুতে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সম্প্রতি করোনা থেকে মুক্ত হলেও তার শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। সর্বশেষ শনিবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় । মিজানুর রহমান খান দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। মিজানুর রহমান খান মা, স্ত্রী, তিন সন্তান, পাঁচ ভাই, তিন বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। হিসাব বিজ্ঞানের ছাত্র মিজানুর রহমান খান নিজের আগ্রহে আইন বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। আইন ও সংবিধান নিয়ে সংবাদ ও সংবাদ বিশ্লেষণ করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের আইন ও সংবিধানের ওপর ছিল তার অগাধ পাণ্ডিত্য। মিজানুর রহমান খান টেলিভিশন টকশোতেও ছিলেন জনপ্রিয় মুখ। আইনের ছাত্র না হয়ে মিজানুর রহমান খান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পাঠদানে যুক্ত ছিলেন। সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান ১৯৬৭ সালের ৩১শে অক্টোবর ঝালকাঠির নলছিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। বরিশাল বি এম কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এসএসসি পাস করার পরই বরিশালের স্থানীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। প্রখ্যাত সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী সম্পাদিত বাংলাবাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাকালীন রিপোর্টার হিসেবে ঢাকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন মিজানুর রহমান খান। পরে পত্রিকাটির প্রধান প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাবাজার থেকে মুক্তকণ্ঠের কূটনৈতিক সংবাদদাতা হিসেবে যোগ দেন। মিজানুর রহমান খান বেশ কয়েক বছর ধরে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার আগে দৈনিক সমকালের প্রতিষ্ঠাকালীন উপ-সম্পাদক ছিলেন। তারও আগে ছিলেন দৈনিক যুগান্তরের উপ-সম্পাদক। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের প্রবাসী আনন্দবাজার পত্রিকার ঢাকাস্থ নিয়মিত প্রদায়ক এবং লন্ডনের ইস্টার্ন আই পত্রিকার প্রদায়ক হিসেবেও কাজ করেন তিনি। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তার কর্মস্থল দৈনিক প্রথম আলো কার্যালয়ে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে তাকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। পৃথক শোকবার্তায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাব মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে মিজানুর রহমান খানের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। স্বাধীন সাংবাদিকতার মহান ব্রতকে সামনে রেখে তিনি নিরলস কাজ করেছেন, সেটি তার সতীর্থ সাংবাদিকরা চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের এই দুঃসময়ে তার মৃত্যু এক বিশাল ক্ষতি। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শোক বার্তায় বলেন, মিজানুর রহমান খান ছিলেন সাহসী সাংবাদিকতার প্রতীক। তার মৃত্যুতে গণমাধ্যম জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ শোকবার্তায় বলেন, বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সাংবাদিকতার পাশাপাশি মেধাবী মিজানুর রহমান খানের রচিত গ্রন্থগুলো মানুষকে সংবিধান ও সরকার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করেছে। মিজানুর রহমান খান তার সাবলীল, বিশ্লেষণী লেখনী ও কথনের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এমপি গণমাধ্যমে পাঠানো শোকবার্তায় প্রয়াত মিজানুর রহমান খানের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শোকবার্তায় মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতায় অনন্য মেধা ও প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রাখা মিজানুর রহমান খানের মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। সাবলীল ও বিশ্লেষণধর্মী লেখনীর কারণে তিনি দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap