দিরাইয়ে ফেসবুকে চুরির প্রতিবাদ করে রোষানলে যুবক
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ‘ছোটবেলা থেকে আমাদের গ্রামের মৎস্যজীবিসহ বিভিন্ন দরিদ্র মানুষের মাছ ধরার জাল, নৌকা, গবাদিপশু চুরি হতে শুনেছি’। চুরি হওয়া মালামাল পরবর্তীতে নির্দিষ্ট হারে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হতো। এসব চুরির ঘটনায় জড়িত আমাদের গ্রামেরই বেশ কিছু পরিবার। এটা সবাই জানতো, তবে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতো না। কারণ কিছু বললেই মারপিট করতো। এরা বংশপরম্পরায় পেশাদার চোর। একসময় তাদের আইডি কার্ডে পেশা চৌর্যবৃত্তি উল্লেখ ছিল।
কথাগুলো সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামের চন্দ্র লাল দাসের পুত্র লিটন দাসের। লিটন দাস বলেন, প্রায় ৬ মাস পূর্বে আমাদের প্রতিবেশী জহরলাল দাসের সব জাল চুরি করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত চোরেরা। আমি ফেসবুকে চুরির ঘটনার প্রতিবাদ জানাই। পরদিন আমাদের একটি নৌকা চুরি করে নিয়ে যায়। আমি ফেসবুকে কারো নাম উল্লেখ না করে চুরির ঘটনার প্রতিবাদ অব্যাহত রাখি। এতে আমার উপর ক্ষেপে যায় তারা। গ্রামের গোলাপ মিয়া, তুলা মিয়া, নাজির মিয়াসহ তাদের লোকজন আমাকে দফায় দফায় হুমকি দিতে থাকে। গত ১৯ জানুয়ারি তারা আমার বাড়িতে যেয়ে আমার বৃদ্ধ পিতামাতাকে গালাগাল করে, আমার মোটর সাইকেল কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেয়। লিটন দাস জানান, নিরাপত্তা চেয়ে দিরাই থানায় সাধারণ ডাইরী করেছেন তিনি।
লিটন দাসের পিতা চন্দ্র লাল দাস বলেন, গত ২০ জানুয়ারি রাত ৯ টায় গ্রামের দেবোত্তর মন্দিরের সামনে গ্রামের সখিচরণ দাস, ইন্দ্রজিৎ দাস, কুঞ্জ মোহস দাস, মঙ্গলচরণ দাস, গোলাপ মিয়া একতরফা পঞ্চায়েত ডাকিয়া লোক দিয়ে আমাকে সেখানে ডাকাইয়া নেয়। আমার ছেলেকে সেখানে হাজির করতে চাপ দেয়। আমার ছেলে দিরাই আছে জানাই। আমার ছেলের ফেসবুকে লেখালেখিতে গ্রামের ইজ্জত গেছে জানাইয়া তারা আমাকে অপমান অপদস্ত করে। আমার ছেলেকে দেশ হতে তাড়াইয়া দেওয়ার হুমকি দেয়। গোলাপ মিয়া হুমকি দিয়া বলে, আমাকে ও আমার ছেলেকে শায়েস্তা করতে যতো টাকা লাগে সে দিবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিজের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছেন চন্দ্র লাল দাস।
গ্রামের লোক ও সাধারণ ডাইরী সুত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৩ জুন রাতে জাহানপুর গ্রামের জহরলাল দাসের মাছ ধরার জাল চুরি হয়। চুরি ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রামের যুবক লিটন দাস তার ফেসবুক আইডি ‘তপন দাস লিটন’ থেকে ২৪ জুন “কাল রাতে ১ টা বাজে জাহানপুর গ্রামে জহরলাল বাবুর বাড়িতে চুরি হইছে, জহরলাল বাবুর সব জাল চুরে নিয়ে যায়। এভাবে চুর চুরি করতে থাকলে জাহানপুর গ্রামের মানুষ কিভাবে চলবে, জাতির কাছে বিচার চাই” লিখে পোস্ট করেন। পরদিনই লিটন দাসের নৌকা চুরির ঘটনা ঘটে।
দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে জাহানপুর গ্রামের লিটন দাস বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডাইরী করেছেন। তদন্ত চলছে, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।