জাতীয়

হাওরের ফসল নিয়ে শংকা

নিজস্ব প্রতিবেদক :: কৃষিপ্রধান ভাটি অঞ্চল সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় একফসলি বোরো জমি এখানকার লোকদের আয়ের প্রধান উৎস। হাওরে ধান পাকতে শুরু করেছে। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে শুরু হবে ধান কাটা। জেলার শাল্লা উপজেলার হিন্দু পল্লী নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কাশিপুর ও পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার ধনপুর, নাচনী, চন্ডিপুর, চন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক। ওই ৫টি গ্রামের লোকদের বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে হাওরে। হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত দুই মামলায় বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাত আসামি করায় গ্রেপ্তার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই গ্রামগুলোর দোষী ও নির্দোষ সবাই। পুরুষশূন্য এসব গ্রামের কৃষকদের হাওরের ধান গোলায় ওঠানো নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এমন অবস্থায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষক-কৃষাণির কপালে। একেতো শ্রমিক সংকট, কালবৈশাখীর চোখরাঙানি, প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে একফসলি বোরো জমির ধান ঘরে তুলতে হয় এখানকার কৃষকদের। তার ওপর এবারের পরিস্থিতি যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার গা হয়ে দেখা দিয়েছে বলে জানালেন এসব গ্রামের নারীরা। তারা বলেন, সময়মতো ধান কাটা না গেলে জমি পালিতে তলিয়ে যাবে। পুরুষ মানুষই ঘরে ধান তুলতে গিয়ে হিমশিম খায়। এখানে আমাদের চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। ধনপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবুবকর মিয়ার যৌথ পরিবারের ৩৫ সদস্যের সংসার ধান চাষের আয় দিয়েই চলে। এবার তাঁর ১শ একর জমিতে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের পুরুষ লোক আত্মগোপন করে থাকায় ধান গোলায় তোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নাচনী গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ১২ সদস্যের পরিবারে ৬০ একর, চন্ডিপুর গ্রামের নূর উদ্দিনের ১৩ সদস্যের সংসারে ৪৮ একর জমির ধানই অবলম্বন। একই অবস্থা বিরাজ করছে ওই গ্রামগুলোর প্রত্যেক পরিবারে। চন্ডিপুর গ্রামের সিরাজুল ইসরাম বলেন, এই কয়েকটি গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবার কৃষিকাজের সাথে জড়িত। অনেক পরিবার বর্গা চাষী। মৌসুমে জমি চাষ করে, বাকিটা সময় দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালায়। জমির ধান জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম। গ্রামবাসী বলেন, সবাইতো এই ঘটনায় জড়িত নয়। দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে নিরাপরাধ লোকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুতি জানান তারা। গত ২৩শে মার্চ ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াগাঁও গ্রাম পরিদর্শনে এসে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ নোয়াগাঁওয়ের ঘটনায় বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা আসামি করেছে। তার মানে পুলিশের হাতে একধরনের ক্ষমতা যাচ্ছে। যার মাধ্যমে এখানকার গ্রামবাসীর বিরাট একটা অংশ হয়রানি হতে পারে। প্রকৃত দোষীরা যাতে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় চলে আসে, নিরপরাধ মানুষ যেন হয়রানি না হয় সরকারের নিকট সে দাবী জানিয়ে জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, গ্রামবাসীদের মাঝে আতংক, তারা গ্রামছাড়া হয়ে আছেন। সামনে এখানে কৃষি মৌসুম। ফসল ঘরে তোলার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জানা যায়, গত ২৫শে মার্চ ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াগাঁও গ্রাম পরিদর্শনে আসেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এ খবরে প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে ওইসব গ্রামের কয়েকশ নারী ও শিশু দাড়াইন নদীর তীরে অবস্থান নেয়। সড়কপথে এসে হেলিকপ্টারে এলাকা ত্যাগ করায় প্রতিমন্ত্রীর দেখা পাননি তারা। সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের লোকেরা সড়কপথে ফেরার জন্য দাড়াইন নদী পাড় হলে সেখানে অবস্থানরত নারী ও শিশুরা মুহিবুর রহমান মানিককে ঘিরে তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় সাহায্য কামনা করেন।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap