৫৭ বছর পর জমির দখল পেল বাউল সম্রাটের পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক :: একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমকে সরকার কতৃক স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়া ২ একর ১১ শতক জমি দীর্ঘ ৫৭ বছর পর বুঝে পেল তাঁর পরিবার। এলাকার একটি প্রভাবশালী পক্ষের বাধার কারণে এই জমির দখল করিম জীবদ্দশায় পাননি। অবশেষে মঙ্গলবার (২৫ মে) স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে জমির সীমানা নির্ধারণ করে বাউল সম্রাটের পুত্র শাহ নুর জালাল কে জমির দখল বুঝিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন। এসময় জমির বন্দোবস্ত গ্রহীতা হিসেবে শাহ আবদুল করিমের নামে সাইনবোর্ডও সেঁটে দেয় প্রশাসন।
জীবদ্দশায় দখলদারদের কাছ থেকে জমি উদ্ধারে ব্যর্থ শাহ আবদুল করিম আক্ষেপ নিয়ে একটি গানও রচনা করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর একমাত্র ছেলে শাহ নূর জালাল জমি ফিরে পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জমির দখল পেতে শাহ আবদুল করিমের ছেলে নূর জালাল সম্প্রতি প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসন প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
শাহ নূর জালাল বলেন, জমি বন্দোবস্ত পেয়ে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করেও দখল পাচ্ছিলাম না। এ নিয়ে বাবার মনে আক্ষেপ ছিল। আজকের দিনটি দেখে যেতে পারলে বাবা অনেক খুশি হতেন। আমি প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, বাউল পুত্র শাহ নূর জালালের আবেদনের প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শাহ আবদুল করিমের নামে বন্দোবস্তকৃত ২ একর ১১ শতাংশ জমির দখলমুক্ত করে তাঁর পুত্র নূর জালালকে দখলদার ও স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে সমঝোতার মধ্যে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল আহমদ, দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায়, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শরীফুল আলম, দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাফর ইকবাল, দিরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার দয়াময় দাস, এসআই মৃদুল, তাড়ল গ্রামের খলিল চৌধুরী, হাজী মোশাহিদ মিয়াসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও এলাকার লোকজন।
শাহ আবদুল করিমের বাড়ি দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করিমের প্রিয় নদী কালনী। নদীর উত্তর পারে উজানধল এবং দক্ষিণ পারে জালালপুর ও তাড়ল গ্রাম। বাউল করিমের নিজের কোনো জমি নেই। এ অবস্থায় ১৯৬৪ সালে প্রশাসন জালালপুর গ্রামের পাশে জালালপুর মৌজায় তাঁকে ২ একর ১১ শতক জমি স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়। এই জমি তাঁর নামে রেকর্ড হয়েছে। শুরু থেকেই তাঁরা জমির খাজনাও পরিশোধ করছেন। কিন্তু যখনই জমির দখলে যেতে চেয়েছেন, তখন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।