জাতীয়

দিরাই ‘চামটি’ খাল : খাল নয় যেন বর্জ্যের ভাগাড়

মোশাহিদ আহমদ, দিরাই :: সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের বুক চিরে বয়ে চলা জলধারাকে ‘চামটি খাল’ নামেই চেনে স্থানীয়রা। কালনী নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি শহরের আনোয়ারপুর, মূল বাজার, হারানপুর, রাধানগর, মজলিশপুর, শুকুর নগর হয়ে ঘাগটিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে হাওরে মিলেছে। খালের শেষপ্রান্ত থেকেই রয়েছে বিস্তীর্ণ হাওরের ফসলি জমি। হেমন্ত মৌসুমে খালে নামমাত্র পানি থাকলেও বর্ষা মৌসুমে সারি সারি বাহারি নৌকা ও স্পীডবোডের আনাগোনায় মুখর থাকে খাল। দিরাই উপজেলার পশ্চিমের আংশিক এলাকাসহ জেলার শাল্লা উপজেলা সদরে যাতায়ত ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম এই চামটি খাল। বর্ষার সময়টাতে দুপাড়ের বাসিন্দারা খালের টলটলে পানিতে গোসলসহ দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ করে থাকেন। বর্তমানে চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু হওয়ায় কালনী নদীর পানি উপচে খালে ঢুকে পড়েছে। খালের শেষপ্রান্তে ঘাগটিয়া গ্রামের পাশে পাউবোর হাওর রক্ষা বাঁধ এখনও অক্ষত থাকায় পানিপ্রবাহ আটকে আছে। ওই বাঁধ কেটে দিলেই খালে পানির বেসামাল স্রোত সৃষ্টি হবে। প্রতি বছরের মতো শুরু হবে নৌ চলাচল। পৌর শহরের মূল বাজার এলাকায় থাকা ব্রীজ খালের দুই পাড়কে একত্রিত করেছে। ব্যস্ততম ওই ব্রীজের নিচে এখন ময়লার ভাগাড়। ময়লার স্তুপ রীতিমতো বাঁধে রুপ নিয়েছে। এসবের বেশীরভাগই পলিথিনসহ প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য। আশংকার বিষয় হচ্ছে পাউবোর বাঁধ কেটে দিলেই স্রোতে বিপুল এই বর্জ্য ভেসে যাবে ফসলি জমিতে। পচনশীল না হওয়ায় এসব পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে উর্বরতা হারাবে ফসলি জমি। স্থানীয়রা জানান, দিরাই পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য এনে এই স্থানে ফেলেন। এছাড়া আশপাশের কিছু ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা এই স্থানে বর্জ্য ফেলায় জলধারাটি এখন যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তাতে দূষিত হয়েছে পানি, কমছে খালের আকার ও গভীরতা। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। খালপাড়ের বাসিন্দারা জানায়, বর্ষাকালে খালে যাত্রী ও পণ্যবাহী শতশত নৌকা স্পিডবোট চলাচল করে। গোসল ও দৈনন্দিন কাজে খালের পানি ব্যবহার করেন তারা। বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানায়, অতীতেও খালে ব্যবসায়ীরা ময়লা ফেলতেন। তবে তা সামান্য ছিল। এবছর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লা ফেলাতে স্তুপ হয়ে গেছে। পৌর এলাকার রাধানগর ও মজলিশপুর মহল্লার অনেক বাসিন্দাই জানায়, দীর্ঘকাল ধরে আমরা এ এলাকায় বংশপরম্পরায় বসবাস করছি। আগে খালে খরস্রোতা পানি প্রবাহিত হতো। হেমন্ত বর্ষা দুই মৌসুমেই খাল দিয়ে বাহারি রঙের নৌকা চলত। খালপাড়ের বাসিন্দারা খালের পানিতে গোসল করত, মাছ ধরত। এখন সবই যেন কেবল স্মৃতি। ইতোমধ্যেই খালের বিভিন্ন অংশে দখলবাজরা দখল করে দোকান ও বাড়িঘর নির্মাণ করে ফেলেছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সরু ব্রীজও নির্মিত হয়েছে। রাতের বেলা শহর এলাকার বাড়িঘরের ময়লা-আবর্জনা এনেও খালে ফেলা হয়। জেলা পরিষদ কিংবা পৌরসভা কেউই খালের রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা। খালটি পুনরুদ্ধার ও বাঁচানোর দাবি তাদের।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap