জাতীয়

দিরাইয়ে অফিসের বারান্দায় সন্তান প্রসবের ঘটনার প্রতিবাদে ফেসবুকে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে প্রসব ব্যথা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটক সংলগ্ন নির্বাচন অফিসের প্রবেশদ্বারে স্থানীয় দুই ধাত্রীর সহযোগিতায় ১ কন্যা সন্তান জন্ম দেন উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ডুলকর গ্রামের রাসমিনা (২১) নামে এক মা।

ঘটনার পর রাসমিনার স্বামী রেস্তোরাঁ শ্রমিক রুবেল মিয়া স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, স্ত্রীকে নিয়ে দিরাই হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি করানোর বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা কোনরকম পরীক্ষানিরীক্ষা না করেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। নিরুপায় রুবেল স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটে যাবার জন্য হাসপাতাল ফটকের সামনে অ্যাম্বুলেন্স খোঁজতে থাকাকালে তার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা তীব্র হয়ে উঠে। এসময় পাশের নির্বাচন অফিসের প্রবেশদ্বারে নিয়ে গেলে সেখানেই কয়েক মিনিটের মধ্যেই স্থানীয় দুই ধাত্রীর সহযোগিতায় ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম দেন রাসমিনা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ঘটনার পর দেশের শীর্ষ স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যম ও স্থানীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রচার হয়। এ ঘটনাকে অমানবিক ও হাসপাতালের দায়িত্বশীলদের দায়িত্বে চরম অবহেলা আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেন এর ব্যবহারকারীরা। বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী নিজের আইডি থেকে পোস্ট করে, অন্যের পোস্টে কমেন্টের মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকেল ৬ টা ৩১ মিনিটে derai uhc Sunamganj ফেসবুক আইডি থেকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বাধীন কুমার দাসের একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। এতে ডা. স্বাধীন বলেন, ‘ বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে দিরাই হাসপাতাল থেকে প্রসূতি রেফার সংক্রান্ত বিষয়টি নজরে এসেছে।
দিরাই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ বিদ্যুৎ রঞ্জন দাসের বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আলোচ্য রোগিনী দিরাই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন না এবং তাঁকে দিরাই হাসপাতাল থেকে কোথাও রেফার করা হয় নাই। এমনকি জরুরী বিভাগেও তিনি কোন সেবা নেননি।
ডাঃ স্বাধীন কুমার দাসের ওই বক্তব্যের পোস্টেই একাধিক নেতিবাচক মন্তব্য দেখা গেছে।

ওই পোস্টে ছাত্রনেতা সালমান মিয়া মন্তব্য করেন, Uhc derai Sunamganj মহোদয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে যখন দিরাই হাসপাতালে সেবা না পেয়ে হাসপাতালের সামনেই নবজাতকের জন্ম এরম নিউজ আসছিলো ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই সিলেটে অবস্থানরত অবস্থায় এভাবে বক্তব্য দেওয়া গণমাধ্যমের সাথে সাংঘর্ষিক। গণমাধ্যমে যে সংবাদ পরিবেশন হয়েছে অনতিবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিন আর ব্যবস্থা নেওয়ার পর এভাবে সুস্পষ্ট বক্তব্যে দিরাইবাসী কে জানিয়ে দিন যে দিরাইয়ের সন্তান আপনি কোন অবস্থাতে আপনার সময়কালীন হাসপাতালে দুর্নীতি বা রুগীকে সেবা না দেওয়ার সুযোগ নেই, ধন্যবাদ।

সিলেট জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও ছাত্রলীগ নেতা সায়েল আহমদ মন্তব্য করেন, আপনাদের দায় এড়ানোর জন্য কর্তব্যরত ডাক্তারের বক্তব্য দিলেন কোন তদন্ত ছাড়া।দিরাই হাসপাতালের সেবার মান দিরাইবাসীর জানা আছে।

সিলেট জজকোর্টের আরেক শিক্ষানবিশ আইনজীবী ইমদাদ সরদার বলেন, দিরাই হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে গেলে কোন চিকিৎসা না করে পাঠিয়ে দেয় সিলেটে এ যেন একটি কমন বিষয়ে দাড়িয়ে গেছে, আর জনপ্রতিনিধিদের আর সোচ্চার হওয়া উচিত এসব বিষয়ে।

ব্যবসায়ী মাওলানা ওবায়দুল হক চৌধুরী কমেন্টে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব ডাক্তার প্রাইভেট রোগী নিয়ে ব্যস্ত। ওদের লাগামধরা সময়ের দাবী। একজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধানের এধরণের বক্তব্য হাস্যকর।

হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজিদুল ইসলাম বলেন,
সেবা দেয়া হয়নি তাই সেবা নিতে পারেন নি। মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট তাই বলছে। এখানে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নয়; বরং সময়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির ব্যর্থতা বা দায়িত্বপালনে অনিহা হতে পারে। খতিয়ে দেখার সবিনয় অনুরোধ থাকলো।

শিক্ষার্থী অনিক রায় লিখেন, রোগী তার বাড়ি থেকে হাসপাতালের উদ্দেশ্য না এসে হাসপাতালের কাছেই এই সরকারি বিল্ডিংয়ের পাশে এসে সন্তান প্রসব করিয়েছে আপনার বিজ্ঞপ্তি দেখে এই মনে হচ্ছে৷ যেনো মনে হচ্ছে রুগীর সাথে আপনাদের ব্যক্তিগত কোনো ঝামেলা আছে৷ আরো সুনিপুণ ও সুচারু ভাবে আপনার বক্তব্য পরিষ্কার করা দরকার ছিলো৷

এছাড়াও অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের আইডি থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান।

দিরাই আবাহনী স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক ওমর ফারুক তপু এঘটনায় গণমাধ্যমকর্মী মোশাহিদ আহমদের একটি ফেসবুক পোস্ট শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে লিখেন, ‘অথচ কোন না কোন মা এদের জন্ম দিয়েছে, এরা এটা ভুলে যায়। সমাজে অনেক কিছুই নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা কিন্তু এদের নিয়ে কোন মাথাব্যথা নাই আফসোস।
ঘটনার রাজ শাক্ষি আমরা Shuaib Ahmed Rajik, Safiul Karim Md Amdad Ahmed,

দৈনিক যুগান্তরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক নেসারুল হক খোকন, সিলেট প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ কাওসার চৌধুরীসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

দিরাই হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন বলেও অনেকে ফেসবুকে মন্তব্য করেন।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap