বারান্দায় সন্তান প্রসব স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতদের জন্য লজ্জাজনক – স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক সংলগ্ন নির্বাচন অফিসের বারান্দায় সন্তান প্রসবের বিষয়টিকে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতদের জন্য লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছেন দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বাধীন কুমার দাস। এ ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত, দুঃখজনক ও বিব্রতকর বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গত ২২ জুলাই নির্বাচন অফিসের বারান্দায় এক প্রসূতি মা সন্তান জন্মদানের ঘটনা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: স্বাধীন কুমার দাস স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বুধবার (২৮ জুলাই) বেলা ১ টায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা অবগত হওয়ার পরই হাসপাতালের মাধ্যমে প্রসূতির প্রসব পরবর্তী প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৩ সদস্যবিশিষ্ঠ একটি কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটি বিষয়টি বিশ্লেষন করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ডুলকর গ্রামের রুবেল মিয়ার স্ত্রী রাসমিনা বিগত ২২ জুলাই মেডিকেল অফিসার ডা. মনি রানী তালুকদারের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসার জন্য যান। ডা: মনি রানী তালুকদার প্রসূতির সংকটাপন্ন অবস্থা বিবেচনা করে তাকে রিস্কবন্ডসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রসূতি রাসমিনা বেগম জরুরী বিভাগ হতে ভর্তি না হয়ে সরাসরি হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে দ্বিতীয় তলায় চলে যান। সেখানে কর্তব্যরত মিডওয়াইফ তাকে জরুরী বিভাগ হতে ভর্তি হয়ে আসতে বলেন। তা না করে কিছুক্ষন পর তারা লেবার ওয়ার্ড হতে প্রস্থান করেন এবং জরুরী বিভাগে যান নাই। যা কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার বিদ্যুত রঞ্জন দাসের বক্তব্য এবং জরুরী বিভাগের রেজিষ্টার খাতা দেখে প্রমানিত হয়। তাছাড়া রোগীনির পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই।
প্রজাতন্ত্রের একটি সেবা প্রতিষ্ঠান এহেন ঘটনার দায় এড়াতে পারেনা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, এইরুপ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের হাসপাতাল ও মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সকল সেবাদানকর্মীকে সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমানে রাসমিনা ও তার সন্তান নিজ বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীর তত্বাবধানে রয়েছেন। হাওরাঞ্চলের গণমানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। সেবার সর্বোচ্চটুকু প্রদানই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য। সেবা প্রদান বিষয়ে সেবা গ্রহীতার যেকোনো অভিযোগ সরাসরি অফিস প্রধানের কাছে বলার জন্য আপনাদের মাধ্যমে অনুরোধ করা হলো। তিনি বলেন, হাসপাতালে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে, প্রাপ্ত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ডুলকর গ্রামের রুবেল মিয়া অভিযোগ করেন, ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রসব ব্যথায় কাতর তার স্ত্রী রাসমিনাকে নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। এসময় রেস্তোরাঁ শ্রমিক রুবেল মিয়া স্ত্রী রাসমিনাকে হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা সিলেট নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে হাসপাতাল ফটকের সামনে এসে এম্বুল্যান্সের খোঁজ করতে থাকেন। এ সময় রাসমিনার প্রসব ব্যথা তীব্র হলে তাকে পার্শ্ববর্তী দিরাই নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বারান্দায় নিয়ে যান। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানেই ফুটফুটে এক মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন রাসমিনা।