দিরাইয়ে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে জখম, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ফেইসবুকে ছাত্রী শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদ করায় জানে আলম (২২) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ নেতা সোহেল বাহিনী। মঙ্গলবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে দিরাই বাজারের পুরাতন লঞ্চঘাট সড়কের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে অতর্কিত হামলার ঘটনাটি ঘটে। হামলায় আহত জানে আলম বর্তমানে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। জানে আলম উপজেলার জগদল ইউনিয়নের নগদীপুর গ্রামের ইয়াসির মিয়ার পুত্র ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পলি টেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী। সে স্থানীয় ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী।
এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সোহেল বাহিনীর প্রধান সোহেল সহ তিন আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
দিরাই থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২০ সালে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র্যালি শেষে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সোহেল নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি অংশ। এসময় অনেকেই জুতা পায়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ওঠে। ওই ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল করে ছাত্রলীগ কর্মী জানে আলম। এরপর সোহেল ও তার অনুসারীরা জানে আলমকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছবিটি ডিলিট করতে বলে। এরপ্রেক্ষিতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ও দিরাই থানায় সাধারণ ডাইরী করে জানে আলম।
সম্প্রতি ছাত্রলীগ ক্যাডার সোহেলের চাচাতো ভাই, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য নাজমুল হকের ছেলে অভি মিয়া দিনদুপুরে দিরাই থানা পয়েন্টস্থ সেন মার্কেটে এক স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে। সেন মার্কেটের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত কয়েক মিনিটের ফুটেজটি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত অভি ও তার চাচাতো ভাই সোহেলের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন ছাত্রীর পিতা। মামলায় অভি মিয়া বেশ কিছুদিন কারাভোগ করে ঈদুল আজহার আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। ছাত্রী শ্লীলতাহানির ঘটনার পর ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আরও অনেকের মতো জানে আলম তার ফেসবুক আইডি থেকে আপলোড করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায়।
তবে মূলত ছাত্রী শ্লীলতাহানির ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করার জের ধরেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে দিরাই থানা পুলিশ ও আহত জানে আলম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমানের সম্পর্কে ভাগ্নে হয় জানে আলম। ঘটনার রাতে মতিউর রহমানের ফার্ণিচারের দোকানের ক্যাশ টেবিলে বসা ছিল সে। এসময় সোহেল, অভি ও তাদের বাহিনী দোকানের ভিতরে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়। ব্যাপক মারপিটে আহত জানে আলম পার্শ্ববর্তী দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানেও দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়।
দিরাই থানার ওসি আজিজুর রহমান ঘটনার বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় আহত জানে আলম বাদী হয়ে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহারনামীয় আসামী সোহেল মিয়া, ফরহাদ মিয়া ও বাদল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।