সারাদেশ

মাদক, সন্ত্রাস ও সুদ মুক্ত ইউনিয়ন গড়তে চান মিফতাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বদরুল ইসলাম চৌধুরী মিফতাহ নির্বাচিত হলে সুদ, সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত ইউনিয়ন গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও গ্রামে গ্রামে ভোটারদের দরজায় যেয়ে এ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। মঙ্গলবার ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে গণসংযোগকালে তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের ভাটিপাড়া গ্রামে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। দাদন ব্যবসায়ীরা সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ দরিদ্র কৃষকদের গোলা থেকে ধান, গোয়াল থেকে গরু, ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে যেতো। না দিলে পুরুষ-মহিলাকে নির্যাতন করতো। মনে প্রতিজ্ঞা করি একদিন এই গ্রামকে সুদ মুক্ত করবো। ২০১৭ সালে আমি আমেরিকা যাবার পর আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে ‘গণকা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন দাঁড় করাই। ওই সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামে সুদ মুক্ত ঋণ বিতরণ শুরু করি। বর্তমানে নিজের গ্রামের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ৪টি গ্রামে সুদ মুক্ত ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম পুরো ইউনিয়নে বিস্তৃত করতে চাই। তিনি বলেন, সুদ মুক্ত ঋণ সবার জন্য নয়। অস্বচ্ছল পরিবার, কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা, দরিদ্র বর্গা চাষী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দেয়া হয়। যদি কেউ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় এবং তার উপযুক্ত কারণ থাকে তবে মওকুফ করা হয়।
মিফতাহ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আমার দৃষ্টিতে এটি খারাপ না। জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে কিছু নিকৃষ্ট নেতা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তৃণমূলের সমর্থন উপেক্ষা করে ব্যাংকে জমানোর উদ্দেশ্যে মনোনয়ন বানিজ্য করেন। এর কারণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত আজ কলুষিত।
ইউনিয়নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে সচেষ্ট থাকবেন জানিয়ে মিফতাহ বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সা. নির্যাতিত হয়েছেন। তাঁর রক্ত মোবারক ঝরেছে। তবুও তিনি পাল্টা আঘাত করেননি। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সুরক্ষা দিতে ইসলাম শিক্ষা দেয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তবে তিনি যেসব নেতা রেখে গেছেন, তারা দিরাই শাল্লায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বীজ বপন করেছেন। আমাদের এলাকার মানুষ অসাম্প্রদায়িক। হিন্দু-মুসলমানে ভেদাভেদ নেই। আমরা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বারবার আমাদের পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত করেছি।
মিফতাহ বলেন, এই ভাটিপাড়া ইউনিয়ন স্বগৌরবে গৌরবান্বিত। এখানে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ডা. কবীর চৌধুরী সহ ডা. ফারুক আহমদ চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার সোলেমান বখত চৌধুরী, প্রয়াত চেয়ারম্যান মইনুল হক চৌধুরী, মঞ্জুরুল ইসলাম চৌধুরী লিটন অনেক গুণিজন জন্ম নিয়েছেন। দেশের উন্নয়নে ধান ও মৎস্য খাতে ভাটিপাড়ার ব্যাপক অবদান রয়েছে। ভাটিপাড়ার উন্নয়নে গ্রামের জমিদার বাড়ি সহ অনেকেই ভূমিকা রেখেছেন। আমার পিতাও গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমি দিয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় করার জন্য আমি প্রায় ৪৫ শতাংশ জমি দিয়েছি। স্কুলের কাজ প্রক্রিয়াধীন। মসজিদ মাদ্রাসাসহ অবকাঠামো উন্নয়নে গ্রামের অনেকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমি ও আমার আমার পরিবার কাজ করেছি। বিগত করোনা ও বন্যায় আমি অসহায় দরিদ্র পরিবারে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি।
তিনি বলেন, স্বনামধন্য এই ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এখানে একটি কলেজ নেই। হাসপাতাল আছে, তবে তালা ঝুলতেছে। ডাক্তাররা বেতন নেন শুনেছি তবে তালাবদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ভাটিপাড়া এখন মারামারি, খুনোখুনির এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
মিফতাহ বলেন, সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও দাবীর প্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় গ্রাম বাংলার মেহনতি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আমি কাজ করতে চাই। ভোটারদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমার প্রতিদ্বন্ধী সব প্রার্থীরাই যোগ্য। তবে যোগ্যতার রায় দিবেন আপনারা। সুদ, মাদক, সন্ত্রাস থেকে যিনি মুক্ত করতে পারবেন। সুখেদুখে যিনি মানুষের পাশে থাকবেন, আমি মনে করি তাকেই ভোট দেওয়া উচিত।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap