শাল্লায় নৌকা ১, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র ৩ জন বিজয়ী
শাল্লা প্রতিনিধি
৫ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ সাধারন নির্বাচনে সুনামগঞ্জের শাল্লায় ৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের আ”লীগ ৪জনকে ও জাতীয় পার্টি ১জনকে মনোনয়ন প্রদান করেন। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ ও আ’লীগের অঙ্গ সংগঠন থেকে বিদ্রোহী হিসেবে ৪জন ও বিএনপি পন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ২জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১০জন সহ মোট ১৭জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।
মনোনয়ন দাখিলের পরপর আ’লীগের নেতৃবৃন্দ দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রত্যাহার করানো সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও আশানুরূপ সফলতা না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন তারা। আবার কোনো কোনো আ’লীগ নেতা দলীয় বিশৃংখলা ও সাংগঠনিক দূর্বলতাকে পরাজয়ের ক্ষেত্র হিসেবে মনে করছেন।
গতকাল ৫জানুয়ারী ৪স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে সম্পুর্ণ শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। কোনোরূপ অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সাধারন ভোটার ও প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীগণ অনুষ্টিত ভোট গ্রহনে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ভোটের ফলাফল দৃষ্টে দেখা যায় ১নং আটগাও ইউনিয়নে বিএনপি পন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আন নোমান আনারস প্রতিকে পেয়েছেন ৭হাজার ১শ ৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে এমদাদুল হক পেয়েছেন ৫হাজার ৯শ ২৯ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেন ঘোড়া প্রতিকে ৩হাজার ৬৬ ভোট, মোঃ সুলতান মিয়া মটর সাইকেল প্রতিকে ৩শ ২৮ ভোট, চশমা প্রতিকে মোঃ মাফিকুল ইসলাম ২শ ৬১ ভোট ও টেলিফোন প্রতিকে ১শ ৬৪ ভোট পেয়েছেন মাসুদ আল কাউসার।
২নং হবিবপুর ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতিকে সুবল চন্দ্র দাস ৭হাজার ৫শ ৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশ আ’লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের শিক্ষিত ও তরুণ প্রার্থী রনজিৎ কুমার দাস পেয়েছেন ৭হাজার ১শ ৪৩ ভোট। ওই ইউনিয়নের বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঝুমন দাস আপন ঘোড়া প্রতিকে পেয়েছেন ৯শ ৬৮ ভোট এবং রাজীব কান্তি দাস শক্তি ঢোল প্রতিকে মাত্র ৪শ ৮৩ ভোট পেয়েছেন।
৩নং বাহাড়া ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু ঘোড়া প্রতিকে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী শাল্লা উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ও অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক কাজল কান্তি চৌধুরীকে প্রায় ৫হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ভোটের অংকে দেখা যায় ঘোড়া প্রতিকে নান্টু পেয়েছেন ১০হাজার ১শ ৫৩ ভোট। পাশাপাশি কাজল কান্তি চৌধুরী নৌকা প্রতিকে ৫হাজার ১শ ৫৯ ভোট ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মাধবী রানী তালুকদার লাঙ্গল প্রতিকে পেয়েছেন মাত্র ১শ ২৬ ভোট।
অপরদিকে ৪নং শাল্লা ইউনিয়নে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী শাল্লা উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়া নৌকা প্রতিকে ৭হাজার ৯শ ৫৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি শাল্লা উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ আবুল লেইছ চৌধুরী আনারস প্রতিকে পেয়েছেন ৫হাজার ৬শ ৩৫ ভোট। ওই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ সহিদুল ইসলাম ঘোড়া প্রতিকে ২শ ৬৩ ভোট ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমরেন্দ্র সরকার মটর সাইকেল প্রতিকে মাত্র ১শ ১২ ভোট পেয়েছেন।
আওয়ামীলীগের এরূপ পরাজয় নিয়ে শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সাথে সরজমিনে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ শুরু থেকেই দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। প্রথমেই আমরা বিদ্রোহীদের বসানোর চেষ্টা করি। আমরা হবিবপুরে একজন, বাহাড়ায় দুইজন ও শাল্লায় দুইজনকে বসাতে সক্ষমও হই। শাল্লা ইউনিয়নে আমরা এর সফলতা পেয়েছি। ওই ইউনিয়নে ২৩২৪ ভোট বেশী পেয়ে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ইউনিয়নে আমাদের নির্বাচিত ১নং ক্রমিকের প্রার্থীদের কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন না দেয়ায় তৃণমূলের আনেক নেতাকর্মী বিদ্রোহীদের সাথে যাওয়াটাও পরাজয়ের একটা বড় বিষয়।
এবিষয়ে শাল্লা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি অ্যাড, অবনী মোহন দাসের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব মেনে নিয়ে উপজেলার সবকটি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে আমি দিনরাত কাজ করেছি। কিন্তু প্রার্থী নির্বাচনে ভূল, দলীয় সাংগঠনিক দূর্বলতা, প্রার্থী কর্তৃক তৃণমূলকে ধরে না রাখতে পারা, দলীয় অনেককে বিদ্রোহীদের সাথে চলে যাওয়া সহ অনেক বিষয়ই পরাজয়ের কারন হিসেবে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, আমাদের শাল্লার আওয়ামীলীগে বিএনপির লোকজনের প্রবেশ সহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে এ পরাজয়ের ক্ষেত্রে।