জাতীয়

দিরাইয়ে ভিজিডির চাল বিতরণে টাকা আদায়


চেয়ারম্যান মেম্বারের সংঘর্ষ, আহত ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক : সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নে গত ১৫ এপ্রিল ভিজিডির চাল বিতরণকালে খরচের কথা বলে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। গত শনিবার (৩০ এপ্রিল) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম চৌধুরী মিফতাহ ও ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাদ্বীব আলীর মধ্যে সংঘর্ষের পর টাকা আদায়ের ঘটনা জানাজানি হয়। সন্ধ্যায় স্থানীয় ভাটিপাড়া বাজারে হামলা, পাল্টা হামলায় উভয়পক্ষের অনন্ত ১০জন আহত হয়েছে। এরমধ্যে চেয়ারম্যানের পক্ষের গুরুতর আহত জিহাদ চৌধুরী (২২) সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় ভাটিপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মামুন চৌধুরী বাদী হয়ে শনিবার রাতেই শাহাদ্বীব আলীকে প্রধান আসামী করে ৭জনের নাম উল্লেখ ও ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেছেন। জানা গেছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নে ভিজিডির ১৯৭জন উপকারভোগী রয়েছেন। এঁরা প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে বিনামূল্যে চাল পাবার কথা। সে অনুযায়ী গত ১৫ এপ্রিল ২ মাসের ৬০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। এ সময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২মাসের সঞ্চয় ৪শ টাকাসহ অতিরিক্ত আরও দেড়শ টাকা আদায় করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য জানান, ভিজিডি বিতরণের দায়িত্বে থাকা প্যানেল চেয়ারম্যান মামুন চৌধুরী উপকারভোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫শ ৫০ টাকা করে রেখেছেন। তবে কোন কোন খাতে টাকা রেখেছেন তা বলতে পারবো না। আমরা পরিষদে নতুন এসেছি। সবকিছু ভালোভাবে জানিনা এখনো।
এদিকে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল আলম চৌধুরী মিফতাহ। তবে এর জের ধরে শনিবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে মেম্বার শাহাদ্বীব আলীর এমন দাবী অস্বীকার করেন তিনি। চেয়ারম্যান মিফতাহ বলেন, শাহাদ্বীব প্যানেল চেয়ারম্যান হতে না পেরে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। আমাকে যেখানেসেখানে অপমান, গালাগালি করে। আজকেও (শনিবার) ভাটিপাড়া বাজারে আমার নাম ধরে গালাগাল করতে থাকলে আমার এক আত্মীয় প্রতিবাদ করে। শাহাদ্বীব তার লোকজন নিয়া আমার আত্মীয়ের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। আমাকে দেখেই শাহাদ্বীব ও তার লোকেরা আমার ওপর হামলা করে। সাধারণ মানুষ আমাকে রক্ষা করেন। শাহাদ্বীব আমার আত্মীয় জিহাদ চৌধুরীকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করে। টাকা নেয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, উপকারভোগীরা দিরাই গিয়ে চাল আনতে গেলে তাদের ৩শ টাকা খরচ হতো। ওদিকে (দিরাইয়ে) আবার রাস্তা বন্ধ থাকায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে হিসাব কইরা দেখা গেছে, ১শ টাকা করে নিলে হয় না। দেড়শ করে নিলে হয়তো ১/২হাজার টাকা বাড়তি হতে পারে। তাই দেড়শ টাকা করে নেয়া হয়েছে। হারামের ১ টাকাও খেতে রাজী নয় জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে, খরচের পর যদি টাকা অবশিষ্ট থাকে, তবে সেটা পরবর্তী মাসে চাল নেয়ার খরচের সাথে তাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে।
ইউপি সদস্য শাহাদ্বীব বলেন, ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১৫০ টাকা আদায় করা হয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। গত শনিবার (৩০ এপ্রিল) আমাদের ভিজিএফ বিতরণ হচ্ছিল। আমার ওয়ার্ডে ১শ নামের ২০ বস্তা চাল বরাদ্দ থাকলেও চেয়ারম্যান দেয় ১৮ বস্তা। প্রতিবাদ করাতে চেয়ারম্যানের বাহিনী আমাকে হামলা করে মারধর করে। আমার ৫/৬জন আত্মীয়-স্বজন হামলায় আহত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ভিজিডির চালের পরিবহন খরচ সরকারিভাবেই দেয়া হয়ে থাকে। একটু দেরীতে পাওয়া যায়, এটুকুই। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap