কর্মকর্তার বিদায় অনুষ্ঠানে কাঁদলেন উপকারভোগী
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ৭/৮ বছর আগে অসুস্থ স্বামী ও ৩ সন্তান নিয়ে চরম আর্থিক সংকটে পরে যাই। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হবার পথে। যুব উন্নয়ন অফিস থেকে আগে ঋণ নিয়েছি। বয়স বেড়ে যাওয়ায় ওই বিপদের সময়ে যুব ঋণ পাওয়ার সুযোগও হারিয়ে ফেলি। এমন সংকটকালে যুব স্যার (দিরাই উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান) আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাকে সাহস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোন অবস্থাতেই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করা যাবে না। স্যার আমার বড় মেয়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এবং আমাকে নমিনি রেখে ৪০ হাজার টাকা ঋণ পাইয়ে দেন৷ ওই টাকা দিয়ে বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করি। পাশাপাশি আমার দুই মেয়ে ও ১ ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যাই। পরবর্তীতে স্যারের পরামর্শে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। এখন আমার বড় মেয়ে পপি দাস নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নার্সের চাকুরী করছে। ছোট মেয়ে অপি দাস নার্সিং কোর্স করছে। একমাত্র ছেলে পলাশ দাস ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছে। যুব স্যার পাশে না দাঁড়ালে হয়তো আমার পরিবারটি শেষ হয়ে যেতো।
সোমবার বিকেলে দিরাই উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কেঁদে কেঁদে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন উপকারভোগী দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের নতুন কর্ণগাঁও গ্রামের সফল আত্মকর্মী দীপ্তি রানী দাস।
প্রশিক্ষিত যুব সংসদ (প্রযুস) ওই বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে। এতে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, আমি এখানে ১২টি বছর পার করেছি। দিরাইবাসীর কথা আমি আজীবন মনে রাখবো। এই কর্মজীবনে কারো মনে যদি কোনো দুঃখ দিয়ে থাকি, কষ্ট দিয়ে থাকি আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় যুব পুরস্কারপ্রাপ্ত সফল আত্মকর্মী মোহন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক জিয়াউর রহমান লিটনের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন চন্দ্র দাস, সফল আত্মকর্মী মিজানুর রহমান, প্রশান্ত সাগর দাস, দিরাই রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোশাহিদ আহমদ সরদার, উপজেলা পরিষদের সিএ ফখরুল আমিন চৌধুরী বাবলু, ইউপি সদস্য অজুদ মিয়া, সমাজকর্মী নেজাবুল ইসলাম, সদরুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মোহন চৌধুরী তাঁর জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্তির পেছনে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার অবদানের উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানান।
আলোচনা সভা শেষে বিদায়ী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।