জাতীয়

দিরাইয়ে সুদখোরদের দৌরাত্ম বন্ধ ও সৌম্য চৌধুরীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবীতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সুদের টাকার চাপে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সুদখোরদের দৌরাত্ম বন্ধে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা দিরাই শাখার উদ্যোগে দিরাই থানা পয়েন্টে এ মানববন্ধন হয়। সংস্থার সভাপতি মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিনের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান লাল মিয়া, সাবেক পৌর কাউন্সিলর জয়নুল হক চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী কাজী নুরুল আজিজ চৌধুরী, এমদাদ সরদার, প্রভাষক মোস্তাহার মিয়া মোস্তাক, হান্নান অর রশিদ, বিথি দাস, সুমন মিয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন।

এদিকে সুদের টাকার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মৃত্যুবরণকারী দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরীর মর্মস্পর্শি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে তিনদিন প্রতিবাদী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। দিরাই থানা পয়েন্টে মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনগুলো। সৌম্য চৌধুরী মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবী জানিয়ে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মৃত্যুর আগে ফেসবুকে সৌম্য চৌধুরী কয়েকজন দাদন ব্যবসায়ীর নামোল্লেখ করে তার পরিণতির জন্য তাদের দায়ী করে গেছেন৷ এদের একজন হাবিবুর রহমান হবু নৌকার মাঝি ছিল। এখন সে বিশাল টাকার মালিক। দিরাই পৌর শহরে তার তিনটি বাড়ি। এতো টাকা সে কোথায় পেল। দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেলা রানী রায়কে সুদে টাকা দিয়ে পরবর্তীতে তার বসত ভিটা জোরপূর্বক দখল নেয়। সেই বাড়িতে এখন হবু বসবাস করে। বক্তারা বলেন, দিরাইয়ে শতাধিক সুদখোরদের দৌরাত্মে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন অনেকে। অনেক ভদ্রলোক  নিঃস্ব হয়েছেন । সৌম্য চৌধুরীর ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে। সুদখোরদের তালিকা করে তাদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তারা।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে পুলিশ প্রশাসনের নজরে রয়েছে চিহ্নিত সুদখোররা। দিরাই  থানার ওসি কাজী মুক্তাদির হোসেন বলেছেন, যেহেতু মৃত্যুর আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে মারা গেছেন সৌম্য চৌধুরী। পুলিশ এ ব্যাপারে বিশদ খোঁজ খবর নিচ্ছে।

দিশারী সমাজ সচেতন ও অবক্ষয়রোধ যুব সংঘের সভাপতি রুকনুজ্জামান জহুরি বলেন, সৌম্য চৌধুরী টাকা পরিশোধ করার পরও অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পরিকল্পিতভাবে চেক-এর মামলা দেয়া হয়। এসবের চাপ সইতে না পেরে মৃত্যুকে বরণ করেন তিনি।

দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. রিপা সিনহা বললেন, সুদখোরদের যন্ত্রণায় যে সৌম্য চৌধুরী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছেন- এটি তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসেই প্রতিয়মান হয়। বিষয়টি নিয়ে সকলে সোচ্চার হওয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত. দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরী ২০২১ সাল থেকে সুদখোরদের যন্ত্রণায় পলাতক ছিলেন। তার স্ত্রী ইলা চৌধুরী জানান, তার স্বামী হবিবুর রহমান হবুর কাছ থেকে কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়ে পাঁচলাখ টাকা দেবার পরও ২৯ লাখ টাকা পাওনার মামলা করেছে। ২০২১ সালের পর থেকে সে বাড়ীতে থাকতে পারে না। দিরাইয়ে যেতে পারে না। তাকে পুলিশ খোঁজে বেড়ায়। এরপর তিনি এখানে-ওখানে থেকে জীবন যাপন করতেন। পাঁচ বছর চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় নিজের সম্পদ বিক্রয় করে মানুষের কাজ করেছেন। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাকে মদ খাইয়ে সুদখোররা চেকে স্ট্যাম্পেসহ নানা কাগজে সই নিয়েছে। হবুর (হবিবুর রহমান) টাকা আমার স্বামী দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশারফ মিয়াকে নিয়ে পরিশোধ করেছেন।  ইলা চৌধুরী বলেন, আমার স্বামীর এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী, সেসব সুদখোরদের বিরুদ্ধে মামলা করবো আমি। আমার স্বামীর মোবাইল ট্যাকিং করলেই কারা কিভাবে তাকে সুদের টাকার জন্য নির্যাতন করেছে, তা বেরিয়ে আসবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার গভীর রাতে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল রোডের ফূলবাড়িয়া এলাকার সড়কের পাশে থেকে পুলিশ সৌম্য চৌধুরীকে অনেকটা অচেতন উদ্ধার করেছিল। রাতেই মৌলভীবাজার হাসপাতালে মারা যান তিনি।

মৃত্যুর আগের দিন তিনি তার নিজের ফেসবুক আইডিতে দিরাইয়ে কিছু মানুষের নামোল্লেখ করে লিখেছেন,‘ সুদখোরদের যন্ত্রণায় এই পথ বেছে নিলাম আমি।’ রোববার রাজানগর গ্রামের শ্মশানঘাটে সৌম্য চৌধুরী শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্ বলেন, সৌম্য চৌধুরী’র মৃত্যু এবং আগের দিন তার নিজের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসের বিষয়টি পুলিশের নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে বিশদ খোঁজ খবর নেবার জন্য। সবকিছু পর্যালোচনা ও তদন্ত করে এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবার ভিত্তি থাকলে পুলিশ সেভাবেই ব্যবস্থা নেবে।

সৌম্য চৌধুরী’র ভাতিজা ধ্রুবজ্যোতি চৌধুরী বলেন, আমার কাকার এমন অমানবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে সকল স্বজনই কষ্টে আছেন। ধর্মীয় আচার শেষ করে পারিবারিকভাবে আমরা  বসবো। এরপর সিদ্ধান্ত নিয়ে আগাবো

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap