দিরাই-শাল্লায় ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সুনামগঞ্জে রাত পোহালেই (৮ই মে) দিরাই- শাল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ না থাকলেও প্রার্থীদের মধ্যে শেষ সময়ে দৌড়ঝাঁপের কমতি নেই। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন সে বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। এছাড়াও ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ওয়াটসঅ্যাপে ভোট প্রার্থনা করে শেষ সময়ে ভোটারদের মন গলানোর চেষ্টা করছেন তারা। জানা যায়, দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. আজাদুল ইসলাম রতন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রিপা সিনহা, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কারকৃত) মো. গোলাপ মিয়া। এখানে মোট ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ২২৫ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ৯৭ হাজার ৩৫৪ জন ও পুরুষ ভোটার ৯৯ হাজার ৮৭০ জন। ৫১০টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে।
উপজেলার জগদল গ্রামের হেলাল আহমদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারের কোন আগ্রহ নেই। মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই এখানে।
দিরাই কালনী নদীর উপর কয়েকবছর আগে ব্রিজ হয়েছে। কিন্তু দিরাই-জগদল সড়ক আজো আলোর মুখ দেখেনি। নেতাদের উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও জয়-পরাজয়ে দলীয় সমর্থন মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলয়ের প্রদীপ রায় এবং এমপি বিরোধী বলয়ের রঞ্জন রায় ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের ৪ জন প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির মো. গোলাপ মিয়া একক প্রার্থী হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। অপরদিকে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে প্রদীপ রায় ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রঞ্জন রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে দুজনই পরাজিত হন। এখন আবার দু’জন পুরোনো লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। এখানে হিসাব মিলানো কঠিন, ত্রিমুখী লড়াই হবে।
এইদিকে শাল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদেও ত্রিমুখী লড়াই হবে বলেই ধারণা করছেন ভোটাররা। তারা হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট দিপু রঞ্জন দাশ, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাশ ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার (বহিষ্কৃত)। সূত্র জানায়, নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাশ। তবে অনেকে এ-ও বলছেন অবনী মোহন দাশ ইতোমধ্যে দিরাই-শাল্লার সাবেক বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উন্নয়নমূলক কাজের অবদান অস্বীকার করে বক্তব্য দেওয়ায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রেমীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।
টানা ছয়বার নির্বাচন করার পর ২০০৯ সালে ১ম বার চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছিলেন অবনী মোহন দাশ। এরপর আরো বেশ কয়েকটি নির্বাচন করেও জয়লাভে ব্যর্থ হন তিনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও শাল্লায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তার পক্ষে কাজ করে রাজনীতিতে তিনি আবার নতুনভাবে সক্রিয় হয়েছেন। একাধিকবার নির্বাচন করে উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বিগত নির্বাচনে জয়লাভ করেন এ্যাডভোকেট দিপু রঞ্জন দাশ। দিপু রঞ্জন দাশ তার সাধ্যের ভেতরে থেকে ৫ বছরে বিভিন্নভাবে মানুষের মন জয় করতে চেষ্টা করেছেন। বিগত পাঁচ বছরের অক্লান্ত সেবা ও পরিশ্রমের সুফল পাবেন বলে দাবি করেছেন তার সমর্থকেরা।
ভোটাররা জানান, এ উপজেলায় অবনী মোহন দাশ, গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার ও দিপু রঞ্জন দাশের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও জনগণের দাবির পরিপেক্ষিতে আমি নির্বাচনে এসেছি। দল আমাকে বহিষ্কার করুক আর যাই করুক আমার নির্বাচনে এসব বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। অপরদিকে এই তিনজন ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এস এম শামীম নামে আরেকজন প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তাকেই বেঁচে নিবেন। এখানে মোট ভোটার ৯১ হাজার ৩৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং নারী ৪৫ হাজার ৪১২ জন। বুধবার সকাল ৮ টা থেকে ৩৭টি ভোটকেন্দ্রে এক সঙ্গে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।