লেখকঃ সুবর্ণা দাস
মাঝে মাঝে মনে হয় আমার কেউ নেই, আমার কিছু নেই! বড় অসহায় আমি! বড় দূর্ভাগা আমি, বড় পরাধীন আমি! একাকী এক যাযাবর সত্তা! বুক ফেটে জ্বলে দুর্মর ঘৃণার আগুন! চোখ বেয়ে নামে তপ্ত বর্ষা! খুব অসহায় লাগে যখন দেখি, শত শত যানবাহনের ভীড়ে তীক্ষ্ণ শব্দের দূষণে, ধুলো বালির শয্যায় শোয়ে আছে শত শত অসহায় টোকাই প্রাণ, অথচ পাশ কাটিয়ে গাড়ি চালিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায় কোটিপতি গাড়ি বাড়ির মালিক! চলে যায় মন্ত্রী মিনিস্টারের গাড়ি! মানিব্যাগ হাতড়াই, দেখি আমার শূন্য থলেতে পড়ে রয়েছে যাতায়াত ভাড়ার কয়টা টাকা! কষ্ট নিঃসৃত দীর্ঘশ্বাস বাতাসে মিলায়ে যায়! যাদের মন আছে তাদের সম্পদ নেই! যাদের সম্পদ আছে তারা শুধু ভাবে নিজেকেই! তাদের ক্ষমতা চোখ আকাশ কেনার স্বপ্নে বিভোর, মাটির শয্যা তারা কখনো দেখে না!
বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামের স্ত্রী! তিনবছর দৌড়িয়েও হাতে পাননি পেনশনের টাকা! ইদে স্ত্রীকে মাংস খাওয়াতে পারে নি বলে মনোকষ্টে স্বামীর আত্মহত্যা! আর্থিক টানাপোড়েনে ২০২১ সালে ১ বছরে ১০১ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা! বেকারের জ্বালায় যুবকের আত্মহত্যা! অভাবের কারণে সন্তাদের মেরে মায়ের আত্মহত্যা! সংসার চালানোর ব্যর্থতায় গৃহস্বামীর আত্মহত্যা!
এত মৃত্যু! এত কষ্ট! এত অশ্রু কেন!!?? এসব দায়ভার কেউ নেয় না কখনও!!
সাংবাদিক খুঁজে সংবাদ! কবি খুঁজে শব্দ! মানী খুঁজে চেয়ার!
রাজনীতিবিদ খুঁজে ক্ষমতা! শিক্ষক খুঁজে ছাত্র! ইঞ্জিনিয়ার খুঁজে যন্ত্রপাতি, ডাক্তার খুঁজে রোগী! উকিল খুঁজে আসামী!
এত এত খোঁজাখুঁজির ভীড়ে তাদের খুঁজে না কেউ, যাঁদের ঘরে চাল নেই, তেল নেই, নুন নেই, ঘরের চালা নেই, পরনে কাপড় নেই! রোগে ঔষধ নেই! যাদের কোনো সুযোগ নেই, কোনো সুবিধা নেই! সেই নি-রন্ন নি-বস্ত্র নিরাশ্রয় জনদের কেউ খুঁজে না! তাদের ভাগ্য যেমন আছে তেমনই থাকে! সকলের উন্নতি হয় কেবল তাদের ভাগ্যের হয় না কোনোরকম পরিবর্তন! সমুদ্রে জোয়ার ভাটা চলতে থাকে, সময় মিলিয়ে যায় সময়ের গহ্বরে! সেই সাথে মিলিয়ে যায় অসহায়দের করুণ আর্তনাদ! এভাবে একদিন আফসোস করতে করতে মিলিয়ে যাবো আমিও! হারিয়ে যাবো কালের ধুয়াশায়, না ফেরার বর্ণনায়!