লেখক:- সুবর্ণা দাস
আকাশ আঁকতে চেয়েছিল মেয়েটি, মুক্ত বলাকার মতো দূরন্ত বেগে উড়তে চেয়েছিল সেই আকাশে। স্রোতস্বিনীর উজানে ভাসাতে চেয়েছিল স্বপ্নের সাম্পান৷ ভরা পূর্ণিমার জোয়ারে সমুদ্র নীলে ঢেউ গুনতে চেয়েছিল কল্লোলিত আবেগে। তার দুচোখ জুড়ে ভালোবাসার গোলাপ। সেই গোলাপের বর্ণ দিয়ে সাজাতে চেয়েছিল একটি রাগ অনুরাগের পৃথিবী।
তার পছন্দমতো রঙে হবে শোবার ঘরের দেয়াল। হালকা সবুজ! ঘরটির কর্ণার রেকে থাকবে কিছু সবুজ গাছ।
মজবুত একটা কাঠের আলমারি থাকবে, সেই আলমারির তাকে তাকে থাকবে শখের সজ্জা। কেন তা নয়! দীর্ঘ দিনের প্রেম। সেই সুবাদে তার দিক থেকে বিশ্বাস আর ভরসার জায়গাটা বেশ মজবুতই ছিল। প্রেমের সার্থকতা পরিণয়ে। মেয়ে ছেলের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়ে ঠিক হলো। আর তখনই সামনে এলো চিরাচরিত সমাজের প্রচলিত পুরুষ মনন। রীমার শখের পুরুষ মিজানুর কনে পক্ষের উপর ঢেলে দিলো যৌতুকের বিষ। ফুলসেট ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ, নগদ টাকা। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছেলেপক্ষকে দুলক্ষ টাকা
দিয়ে দিলো রীমার বাবা। আত্মসম্মানী মেয়ে রীমা মেনে নিতে পারেনি তা! মেনে নিতে পারেনি তার ভালোবাসার অপমান।
মিজানুরের লোভী মনন রীমার অন্তরকে পুড়িয়ে দিলো৷।
তবে কি প্রেম বলে কিছু নেই! বিশ্বাস ভালোবাসা বলে কিছু নেই! এতদিনের পরিচয়কে হঠাৎই তার কাছে অচেনা মনে হতে লাগলো৷ মিজানুরের মন পড়তে গিয়ে ব্যর্থ রীমা অবশেষে নিজেকে সঁপে দিলো মহাকালের রথে। মিজানুরের নোংরা লোভের কাছে পরাজিত হলো রীমার ভালোবাসা।
সেই অভিমানে থেমে গেলো স্রোতস্বিনীর কল্লোল, থেমে গেলো বর্ষা জলের ধারাপাত। পুড়ে ছাই হয়ে গেলো ফাল্গুনী বাস্তুজগত। রীমার পৃথিবীতে নেমে এলো কবরের নিস্তব্ধতা!
লোভ আর লালসার কোপে পৃথিবী থেকে ঝরে গেলো একটি নিষ্পাপ ফুল।
আর কত রীমাকে এভাবে লোভের বলি হতে হবে? আর কত প্রেম পুড়বে অবিশ্বাসী আগুনে? আর কত জীবন জ্বলবে প্রতারণার নরকে?? আর কত, আর কত প্রাণ? নিজের লোভকে সামলাতে না পারলে তোমরা কেউ কখনও ভালোবেসো না! নিজের নোংরা প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে
আর কোনো সরলাকে পুড়িয়ে মেরো না! সত্যিকারের ভালোবাসতে না পারলে ভালোবাসতে যেও না! এভাবে কারো জীবন ধ্বংস করো না! নিজের বিবককে জাগ্রত করো। মানুষ হও, তোমরা মানুষ হও।